ভাঙ্গা-পায়রা বন্দর রেলপথ নির্মাণে অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাব

0
531

রাজধানীর সঙ্গে পায়রা বন্দরের সরাসরি রেল সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল ও পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইশেষে বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। ২১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যদিও প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (পিডিপিপি) এ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা।

এ হিসাবে রেলপথটি নির্মাণব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় চারগুণ। যদিও ভাঙ্গা-পায়রা বন্দর রেলপথ নির্মাণব্যয়ের এ হিসাবই চূড়ান্ত নয়। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হলে তা ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রমতে, ভাঙ্গা-পায়রা বন্দর রেলপথ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ যৌথভাবে করছে দক্ষিণ কোরিয়ার দোহওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং, স্পেনের টিওয়াইপিএসএ কনসাল্টিং ও বাংলাদেশের ডিডিসি লিমিটেড। সম্প্রতি তারা ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন-সংক্রান্ত প্রতিবেদন রেলপথ মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করে।

এতে দেখা যায়, ২১৪ দশমিক ৯০ কিলোমিটার এ রেলপথে মোট ২০টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে ১৯টি নতুন নির্মাণ করতে হবে এবং ভাঙ্গা জংশন স্টেশনটি মডিফিকেশন করতে হবে। ১৯টি স্টেশনের মধ্যে কয়েকটি হবে প্রধান স্টেশন। এগুলো হলোÑটেকেরহাট, মাদারীপুর, বরিশালের গৌরনদী, বরিশাল বিমানবন্দর, বরিশাল নগরীর কাশিপুর, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, বরগুনার আমতলী, পায়রা বন্দর, পায়রা বিমানবন্দর ও কুয়াকাটা।

এ রেলপথে আটটি বড় রেল সেতু থাকবে। এগুলো আড়িয়াল খাঁ নদ, দোয়ারিকা ও শিকারপুরে থাকা সন্ধ্যা নদী, কীর্তনখোলা, পায়রা, লোহালিয়া, আন্ধারমানিক ও হাজীগঞ্জ নদ-নদীর ওপর নির্মিত হবে। এছাড়া টেকেরহাট-মহিপুরসহ কয়েকটি নদীতে নির্মাণ করা হবে মাঝারি রেল সেতু। এছাড়া প্রায় ২০০টি কালভার্ট বা ছোট সেতু থাকবে।

প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রেলপথটি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যয় হবে আট হাজার ৪২৩ কোটি ২২ লাখ টাকা, মাটির কাজে ব্যয় হবে চার হাজার ৫৩৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণে ১৪

 হাজার ৪৮০ কোটি টাকা, স্টেশন ও বিল্ডিং নির্মাণে ৪০৬ কোটি টাকা, ট্র্যাক (রেলপথ) নির্মাণে তিন হাজার ১৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, সিগন্যালিং কাজে ৪২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং টেলিকমিউকেশন খাতে ৩৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

এদিকে আনুষঙ্গিক খাতে ৪২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, সাধারণ প্রয়োজনে ৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, পরামর্শক খাতে ৯৬০ কোটি টাকা এবং কর ও অন্যান্য চার্জ খাতে দুই হাজার ২৩৯ কেটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর বাইরে তিন শতাংশ ফিজিক্যাল ও দুই শতাংশ কনটিনজেন্সি ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে রেলপথটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৯৫৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

যদিও প্রকল্পটির পিডিপিপিতে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা, রেলপথ ও উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণে ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং রেলপথ ও সিগন্যালিং খাতে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। এছাড়া জনবল নিয়োগ ব্যয় বাবদ ২০ কোটি টাকা, পরামর্শক বাবদ ২০০ কোটি টাকা, স্টেশন নির্মাণ বাবদ ৩০০ কোটি টাকা এবং পরিবহন ও যানবাহন কেনা বাবদ ২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশের সুরক্ষা বাবদ আরও ৫০ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়। সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল।

জানতে চাইলে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, পিডিপিপি অনেকটা ধারণার ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছিল। কয়েক বছর আগে প্রণীত পিডিপিপিতে সে সময় চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয়ের ভিত্তিতে আনুমানিক একটা হিসাব করা হয়। তবে সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে বর্তমান ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়াটা স্বাভাবিক। যদিও ডিপিপি প্রণীত হওয়ার আগে এ ব্যয় চূড়ান্ত বলা যাচ্ছে না, তবে শেষ পর্যন্ত এ ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে রেলওয়ের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প হলো পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প। এ প্রকল্পের কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১৮২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর ভাঙ্গা-পায়রা বন্দর রেলপথ নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১৭১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ফলে বর্তমান হিসাবে এটি দেশে রেলপথ নির্মাণের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়। যদিও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ছিল ১৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, পরে তা বৃদ্ধি পায়। তাই ভাঙ্গা-পায়রা বন্দর রেলপথ নির্মাণব্যয় বাড়লে সেটি হবে সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল প্রকল্প।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here