রেল সম্পদ রক্ষা ও যাত্রী সেবায় কঠোর জিআরপি

অতীতের চেয়ে রেলওয়ে পুলিশের কার্যক্রমকেও ডিজিটাইজড করা হচ্ছে

0
599

রেলওয়ের সম্পদ রেল লাইন, ট্রেনের ইঞ্জিনের জ্বালানি তেল, ট্রেন রক্ষা এবং ভ্রমণকারী যাত্রী ও তাদের মালামালের নিরাপত্তা প্রদানে কঠোর ভূমিকা পালন করছে রেলওয়ে পাকশী জেলা পুলিশ (জিআরপি)। খোলা রেল লাইনের উভয় পাশে ১০ ফিট দূরত্ব পর্যন্ত ক্ষমতা প্রয়োগের সক্ষমতা রয়েছে রেলওয়ে পুলিশের। এই সক্ষমতা নিয়েই রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিশাল রেলওয়েকে রক্ষা করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই রেলওয়ে পাকশী জেলা পুলিশ সুপারের অধিনস্থ ঈশ্বরদী জিআরপি থানাসহ সকল থানার মাধ্যমে স্টেশনগুলোকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখার আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যহৃত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারা প্রতিরোধে জিআরপি পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনায় কঠোর ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি এই অপরাধ প্রতিরোধে অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে জনসচেতনামূলক প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছে।

অতীতের চেয়ে রেলওয়ে পুলিশের কার্যক্রমকেও ডিজিটাইজড করা হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টিও এখন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তবে এখনো রেলওয়ে পুলিশে রয়েছে নানা সমস্যা। জিআরপি থানা ভবনের সমস্যা, পুলিশ সদস্য নগণ্য, পুলিশ সদস্যের থাকার জন্য নেই প্রয়োজনীয় ব্যারাক, জরুরি চলাফেরার জন্য জিআরপি পুলিশের নেই নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। এতো সমস্যার মধ্যেও জেলা পুলিশের মতোই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে জিআরপি পুলিশ। রেলওয়ে পাকশী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহাব উদ্দীন কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকল আন্তঃনগর, গুরুত্বপূর্ণ মেইল ও কমিউটার ট্রেনে (টিজি) ট্রেন গার্ড  হিসেবে রেলওয়ে পুলিশের একটি দল নিয়োজিত থাকছে। যারা ট্রেনটির সমগ্র যাত্রাপথে যাত্রী, তাদের মালামাল ও ট্রেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্মেও রেলওয়ে পুলিশ নিরাপত্তা প্রদান করছে। আবার গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনসমূহে রেলওয়ে পুলিশ সার্বক্ষণিক তথ্য কেন্দ্র সেবা প্রদান করছে।

পশ্চিমাঞ্চল পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র মতে, দেশের অন্যান্য এলাকার মতো রেলওয়ে পাকশী জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহাব উদ্দিনের কঠোর নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে জিআরপি পুলিশ রেলওয়ে পাকশী বিভাগের অধিনে চলাচলকৃত সকল ধরণের ট্রেন, ট্রেন যাত্রীদের স্টেশনে নিরাপত্তা প্রদান, আগমন ও নির্গমণ করতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছে। ট্রেনের ছাদে, ইঞ্জিনে ও কামরায় অতিরিক্ত যাত্রী ভ্রমণ প্রতিরোধ করছে। অসুস্থ ট্রেন যাত্রীদের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রেরণ করতেও ভূমিকা রাখছে।

সূত্র মতে, জিআরপি পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রেলওয়ে, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে রেলরুটে মানব পাচার প্রতিরোধ ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ভূমিকা পালন করছে। একই সঙ্গে মাদক দ্রব্য ও চোরাচালানীর পণ্য পরিবহণ ও পাচার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে। রেল স্টেশন, প্লাট ফর্মে অবাঞ্চিত লোকজন ও ভিক্ষুক মুক্ত রাখতে কাজ করছে।

বর্তমানে “৯৯৯” এর মাধ্যমে চলন্ত ট্রেনে কিংবা রেলওয়ে পুলিশের অধিনস্থ সীমানার মধ্যে সব ধরণের পুলিশিং সেবা আন্তরিকতার সঙ্গে প্রদান করছে।

সূত্র মতে, ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে জ্বালানি তেল চুরির সঙ্গে কিছু ট্রেন চালক (লোকো মাস্টার), ট্রেনের সহকারী চালক (এএলএম), রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ভয়ংকর চক্র জড়িত রয়েছে। পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের এসপি শাহাব উদ্দিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ওসি গোপাল কর্মকার, রেলওয়ে ডিএমই (লোকো) আশিষ কুমার মন্ডলের সহযোগিতায় বর্তমানে ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে তেল চুরি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে জিআরপি পুলিশ। তবে ডিএমই ও ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ওসিকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে হুমকি ধামকি ও ভয়তীতি প্রদান করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার (জিআরপি) ওসি গোপাল কর্মকার জানান, রেলওয়ে পাকশী জেলা পুলিশ সুপারের কঠোর নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে এই প্রথমবারের মতো রেলওয়ের ইঞ্জিন থেকে জ্বালানি তেল চুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। ইঞ্জিন থেকে তেল চুরির সঙ্গে রেলওয়ে, রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একাধিক সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছিল। এই সিন্ডিকেট বছরে কয়েককোটি টাকার তেল ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে চুরি করে বিক্রয় করতো। এটা বর্তমানে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। তেল চুরি প্রতিরোধ করে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বলেও দাবি করেন ওসি।

তিনি আরো জানান, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনকে পুলিশি নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় স্টেশনের প্লাটফর্মে পুলিশি পাহারা রাখা হয়। এই কারণে স্টেশনে অবাঞ্চিত লোকসহ ছিনতাইকারী, বকাটেদের আনাগোনা শুন্যের কোটায় আনা সম্ভব হয়েছে। এখন ট্রেনভ্রমণকারী সকল যাত্রীয় প্রয়োজনে স্টেশনে বিশ্রাম কক্ষে ও আসনগুলোতে স্বাচ্ছন্দে বসতে পারছেন।

রেলওয়ে পাকশী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহাব উদ্দিন জানান, রেলওয়ের সকল সম্পদ রক্ষায় জিআরপি পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যদিও আমাদের সক্ষমতা ও জনবল কম। তারপরও কোনো মতেই রাষ্ট্রীয় রেল সম্পদকে কোনো ব্যক্তির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হতে দেওয়া হবে না। 

তিনি আরো জানান, রেলওয়ে পুলিশকেও জেলা পুলিশের মতো আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা গেলেই জিআরপি পুলিশের কার্যক্রমেও অভাবনীয় গতি আসবে বলে আশা ব্যক্তবাদী পুলিশের এই কর্মকর্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here