রেলপথে ঢাকা থেকে কলকাতা পৌঁছাতে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও তিন বছর পর এটিই হবে বাস্তবতা— বলছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প চালুর পর ঢাকা-কলকাতার যোগাযোগে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটবে। এখন যেখানে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে তিন বছর পর সেখানে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কলকাতায় পৌঁছানো যাবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে এখন ঢাকা থেকে সরাসরি কলকাতায় যাওয়া যায়। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে অন্তত ১০ ঘণ্টা। ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে পদ্মা নদীর ওপর রেলসেতু চালু হবে। এটি চালু হলে ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার সময় দুই-তৃতীয়াংশ কমে আসবে।
এদিকে, রেলপথে কলকাতা থেকে আগরতলা যেতে সময় লাগে ৩০ ঘণ্টা। সেই সময়ও কমে আসতে পারে ছয় ঘণ্টায়। পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে এ রুটেও রেল পরিষেবা চালু হতে পারে।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে এখন ঢাকা থেকে সরাসরি কলকাতায় যাওয়া যায়। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে অন্তত ১০ ঘণ্টা। ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর রেলসেতু চালু হবে। এটি চালু হলে ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার সময় দুই-তৃতীয়াংশ কমে আসবে।
বর্তমানে কলকাতা স্টেশন থেকে নদীয়া হয়ে গেদে এবং গেদে হয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত স্টেশন দর্শনা পার হয়ে ঢাকায় অবস্থিত ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছায় মৈত্রী এক্সপ্রেস। এ রুটে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে হয়।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে কলকাতা স্টেশন থেকে বনগাঁ জংশন হয়ে হরিদাসপুর সীমান্ত দিয়ে বেনাপোল হয়ে যশোর, নড়াইল, ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা পৌঁছতে পারবে ট্রেনটি। এ রুটের দূরত্ব দাঁড়াবে প্রায় ২৫১ কিলোমিটার। যা পার করতে মৈত্রী এক্সপ্রেসের গতিতে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লাগার কথা নয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. শাহাদাত আলী সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার কারণে এখন ঢাকা-কলকাতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ আছে। স্বাভাবিক সময়ে এ পথ ভ্রমণে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। তবে পদ্মা রেল সেতু চালু হলে বড়জোর সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগবে।
এদিকে, সড়ক পথে ঢাকা-কলকাতা যেতে প্রায় সারাদিন লেগে যায়। দূরত্ব তো আছেই, সঙ্গে পদ্মাতীরে ফেরির জন্য দীর্ঘ লাইনের অপেক্ষা। সেই দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। পদ্মা নদীর ওপর তৈরি হচ্ছে বহুকাঙ্ক্ষি সেতু। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগামী জুনে চালু হচ্ছে এ সেতু। তবে সেতুর ওপর দিয়ে পুরোপুরি রেলসংযোগ পেতে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাওয়া-জাজিরার মধ্যে অবস্থিত মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। দোতলা মূল পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে হচ্ছে রেলপথ। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। রেলসেতু ও রেলপথ নির্মাণের পর ঢাকা-কলকাতা যোগাযোগে অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ২০২৪ সালের মার্চে পদ্মা নদীর ওপর রেলসেতু চালু হলেই ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে লাগবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা।বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৪১ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।
প্রকল্পটি সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক তালিকাভুক্ত। রেলপথের ঢাকা-মাওয়া ও ভাঙ্গা-যশোর অংশের নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার কথা। প্রকল্পের অধীনে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রড গেজ রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৬৬ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৩৬ শতাংশ, ভাঙা-যশোর অংশের অগ্রগতি হয়েছে ২৫ শতাংশ।
রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন এটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি নিয়মিত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, অগ্রাধিকার এ প্রকল্পসহ রেলের সব প্রকল্প যথা সময়ে বাস্তবায়নের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে, প্রকল্পের (পিবিআরএলপি) ভায়াডাক্ট-২ এর সেগমেন্টাল গার্ডার বসানোর কাজ নির্ধারিত সময়ের ৫১ দিন আগে শেষ হয়েছে। গত ৪ মে প্রকল্প এলাকার পিয়ার এম-১ ও পিএন-১ এর ওপর বক্স গার্ডারের শেষ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে এ কাজ শেষ হয়েছে। ওইদিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘মাওয়া, ভাঙ্গা, শিবচর ও জাজিরায় রেলস্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। ভাঙ্গায় রেল জংশন হবে। এটিকে একটি আইকনিক স্টেশনে পরিণত করা হবে।’
রেলপথমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে সড়ক ও রেলপথ যুক্ত আছে। রেলের অংশটি ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত। এ প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত ধরা আছে। আগামী বছর যখন পদ্মা সেতু চালু হবে, একই দিন সেতুর ওপর দিয়ে মাওয়া প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলবে।’