রেলের ৪০ ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনায় সাশ্রয় ৩১৮ কোটি টাকা

0
578

ইসমাইলআলীবাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে (রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও খুলনা বিভাগ) চলাচল করে ব্রডগেজ ইঞ্জিন। বর্তমানে রেলের বহরে এ ধরনের ইঞ্জিন রয়েছে ৯২টি, যার প্রায় অর্ধেকই মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব ইঞ্জিন দিয়ে সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য তিন বছর আগে ৪০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনায় চুক্তি করে রেলওয়ে, যেগুলো দেশে আসতে শুরু করেছে। তবে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম পাওয়ায় ইঞ্জিনগুলো কেনায় রেলের সাশ্রয় হয়েছে ৩১৮ কোটি টাকা।

সম্প্রতি প্রকল্পটির সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। তাতেই এ তথ্য উঠে এসেছে। শিগগিরই আরডিপিপি যাচাই-বাছাইয়ে সভা আহ্বান করা হবে।

তথ্যমতে, ৪০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনায় দর প্রাক্কলন করা হয়েছিল এক হাজার ৪৭৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তবে ইঞ্জিনগুলোর জন্য অনেক কম দরপ্রস্তাব করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের প্রগ্রেস রেল লোকোমোটিভ ইনকরপোরেশন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ইঞ্জিনগুলো কেনায় চুক্তি করা হয়। এতে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ১১৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৪০টি ইঞ্জিন কেনায় সাশ্রয় হচ্ছে ৩১৮ কোটি দুই লাখ টাকা বা ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ অর্থ।

জানতে চাইলে মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প) মো. মিজানুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ৪০টি ইঞ্জিন কেনায় প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অনেক কম প্রস্তাব করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রগ্রেস রেল। এতে বড় অঙ্কের ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। তবে ইঞ্জিনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ (স্পেয়ার পার্টস) কেনা, বৈদেশিক প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। তারপরও সার্বিকভাবে বড় ধরনের ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে।

তথ্যমতে, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন (রোলিং স্টক সংগ্রহ)’ প্রকল্পের আওতায় ব্রডগেজ ইঞ্জিনগুলো কেনা হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিপি) অর্থায়নে প্রকল্পটির আওতায় ইঞ্জিন ছাড়াও ব্রডগেজ ও মিটারগেজ পণ্যবাহী ওয়াগন কেনা হচ্ছে। ডিজেল ইলেকট্রিক (ডিই) এ ইঞ্জিনগুলোর সক্ষমতা তিন হাজার ২৫০ বিএইচপি হর্সপাওয়ার। এগুলো ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। যদিও লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে ইঞ্জিনগুলো ৬০-৭০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চালানো যাবে না। আর প্রতিটি ইঞ্জিনের এক্সেল লোড ১৮ দশমিক আট টন।

চুক্তির ২৪ থেকে ৩৬ মাসের মধ্যে ইঞ্জিনগুলো সরবরাহের কথা ছিল। তবে কভিড সংক্রমণ শুরুর পর প্রকল্পটির অগ্রগতি কিছুটা ব্যাহত হয়। তবে এরই মধ্যে দুই ধাপে ১৬টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন দেশে এসে পৌঁছেছে। প্রথম ধাপে আটটি ইঞ্জিন আসে গত বছর মার্চে। আর দ্বিতীয় ধাপে গত মাসে এসেছে আরও আটটি ইঞ্জিন। বাকি ২৪টি ইঞ্জিন তিন ধাপে আগামী পাঁচ মাসের (জুন) মধ্যে দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে রেলের বহরে ইঞ্জিন রয়েছে ২৬৩টি। এর মধ্যে ১৭১টি মিটারগেজ ও ৯২টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন। আর ব্রডগেজ ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে ৪৩টি বা ৪৭ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ। এগুলোর মধ্যে ১৭টির আয়ুষ্কাল ৫০ বছরের বেশি, ১৪টির বয়স ৪০ বছরের বেশি এবং ১২টির আয়ুষ্কাল ৩০ বছরের বেশি। আর ২০ বছরের কম তথা এখনও আয়ুষ্কাল রয়েছে, এমন ইঞ্জিন রয়েছে ৪৯টি।

রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। জ্বালানি তেল বেশি লাগে এসব ইঞ্জিনে। আবার চলতে চলতে হঠাৎ ট্র্যাকেই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। তাছাড়া পুরোনো এসব  ইঞ্জিনের কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে তা সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই রেলের প্রকৌশলীদেরই স্থানীয়ভাবে ওয়ার্কশপে যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হয়। কিন্তু সেগুলোও যথাযথভাবে কাজ করে না। এসব ভোগান্তি দূর করতেই ৪০টি ইঞ্জিন কেনা হয়েছিল।

ইঞ্জিনগুলো বহরে যুক্ত হলে পশ্চিমাঞ্চল রেলের যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা অনেক বাড়বে বলে মনে করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএম মজুমদার। তিনি বলেন, পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেনের সংখ্যা বাড়লেও ২০১৩ সালের পর নতুন ব্রডগেজ ইঞ্জিন রেলের বহরে যুক্ত হয়নি। সে সময় ভারত থেকে দুই ধাপে ২৬টি ইঞ্জিন কেনা হয়েছিল। তবে ব্রডগেজ ইঞ্জিনগুলোর প্রায় অর্ধেকেরই আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। তাছাড়া ব্রডগেজ ইঞ্জিন চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই ৪০টি ইঞ্জিন কেনা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের একটি অংশ উদ্বোধন করা হবে। তখন ওই রুটে নতুন ট্রেন চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালু হলে ওই রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ শেষ হলে ২০২৪ সালে পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ানো যাবে। আবার খুলনা-মোংলা বন্দরে রেলপথ নির্মাণশেষে সেখানেও নতুন ট্রেন চালু করা হবে। তখন ব্রডগেজ ইঞ্জিনের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। তাই ইঞ্জিনগুলো যুক্ত হলে রেলের সার্বিক সক্ষমতা বাড়বে।

সূত্র:শেয়ার বিজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here