বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে তিন হাজার ৫৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমছে। এছাড়া চলমান উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ৫৬৭ কোটি টাকা। তবে প্রায় দ্বিগুণ ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পে।
সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছিল। তবে অনেক প্রকল্পে সব টাকা ব্যয় হচ্ছে না। ফলে সংশোধিত এডিপি বা চূড়ান্ত বরাদ্দে কমছে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা চূড়ান্তভাবে উন্নয়ন বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে সরকার। ১ হাজার ৭৫৪ প্রকল্পে এই অর্থ ব্যয় হবে। মোট বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্য থেকে বৈদেশিক ঋণ ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা এবং দেশীয় অর্থায়ন ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কৃষি, শিল্প ও সমন্বয় উইং) মো. ছায়েদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়ন ধরে চূড়ান্ত আরএডিপি ২ লাখ ১৭ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ব্যতিত উন্নয়ন বরাদ্দ ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা।
১০টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প
এডিপিতে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। এখান থেকে চূড়ান্ত এডিপিতে বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে তিন হাজার ৫৯০ কোটি টাকা কমছে। মেট্রোরেল প্রকল্পে এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চূড়ান্ত বা আরএডিপিতে বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। ফলে ৫৬৭ কোটি টাকা কমছে।
বরাদ্দ ঠিক থাকছে মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টে। এই প্রকল্পে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।
এডিপিতে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। পদ্মা রেল সংযোগের কাজ এগিয়ে নিতে প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় বাড়ছে। প্রায় হাজার কোটি টাকা বাড়ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে। এই প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
সাসেক (সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন) সড়ক সংযোগ প্রকল্প
এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ কমে ২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা হচ্ছে। বরাদ্দ কমছে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পেও। এডিপিতে এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এখান থেকে বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায়। ফলে বরাদ্দ কমছে ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।
ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প
সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর) – সিলেট তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ছে। এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ফলে ঢাকা-সিলেট ফোরলেনে বরাদ্দ বাড়ছে ৪৭৫ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাত
পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৫৫ হাজার ৮২৭, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৯ হাজার ২১৪, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষায় ২০ হাজার ৮২৪, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৫ হাজার ৫২০, স্বাস্থ্য খাতে ১৩ হাজার ৭৯৭, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনে ৯ হাজার ৮৪, কৃষিতে ৭ হাজার ২৭৯, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৫৩৭ এবং জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে ৩ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।