বাংলাদেশের রেলওয়ের কম্পিউটারাইজড্ টিকেটিং সিস্টেম

0
398

বাংলাদেশের রেলওয়ের কম্পিউটারাইজড্ টিকেটিং সিস্টেম চালু হয় ১৯৯৬ সাল থেকে টেকনোহেভেন কোম্পানির হাত ধরে। তখন পুরো বাংলাদেশের মাত্র ৬ টি স্টেশনের কাউন্টারে পাওয়া যেতো এই টিকেট। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত BRITS এর দায়িত্বে সম্মিলিত ভাবে ছিলো ড্যাফোডিল সফটওয়্যার লিমিটেড এবং সিএনএস লিমিটেড । টেকনোহেভেনের মতোই দুপাশে স্পাইরাল পাঞ্চ ছিলো ড্যাফোডিলের টিকেট। সময়ের পালাবদলে যুগের সাথে তাল মেলাতে ২০০৭ সাল থেকে সিএনএস লিমিটেড স্বতন্ত্র হয়ে একযোগে ৪৪ টি স্টেশনে এই টিকেট নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু করে। তখন নীল রঙের টিকেট ছিল, CNA নাম্বারে টিকেট হতো, টিকেটের তথ্য সংগ্রহে রাখার জন্য একসাথে দুটো টিকেট প্রিন্ট হতো প্রিন্টারে। একটি রেকর্ড কপি, অন্যটি যাত্রী কপি। এই টিকেটে সকল তথ্যাদি বাংলায় লেখা হতো কিন্তু *১৩১# নাম্বারে গ্রামীন বাংলালিংকের মাধ্যমে টিকেট কাটলে সেটাতে বাংলার নিচে ইংরেজিতেও লেখা থাকতো। ২০১৪ সালের শেষের দিকে বা ১৫ সালের শুরুর দিকে সিএনএস তাদের টিকেটে বেশ পরিবর্তন আনে। হলুদ টিকেটে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও সকল তথ্য প্রিন্ট হতো, তবে পূর্বের মতো দুটি নয়, একটি টিকেটই প্রিন্ট হতো। স্ব স্ব স্টেশন কোডের পাশে ৮ ডিজিটের নাম্বার হতো, টিকেটের তথ্য সার্ভারে সংরক্ষিত থাকতো। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব (৩৯) পশ্চিম (৪০)মিলিয়ে মোট ৭৯ টি স্টেশনে এই সিস্টেম চালু রয়েছে। বী.মু.সি.ই, ঠাকুরগাঁও রোড, শহীদ এম মনসুর আলী, বেনাপোল, নেত্রকোনা, মোহনগঞ্জ, শমসেরনগর, কসবা স্টেশনে এই সিস্টেমে টিকেট পাওয়া গেলেও বগুড়া ও ঈশ্বরদী বাইপাসের মতো জন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে এই সিস্টেম চালু হয় নি এখনও। তবে এদিক থেকে এগিয়ে রয়েছে জামালপুর(৫ টি), কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার(৫)টি স্টেশন। বাংলাদেশে ৪৫০ এরও অধিক রেল স্টেশন রয়েছে। নতুন রেলপথে আরো স্টেশন নির্মাণাধীন রয়েছে। প্রায় ১০৬ টি রেলস্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রা বিরতী রয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২ এ অবশেষে Bangladesh Railway Integrated Ticketing System (BRITS) ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লাই, ইনস্টল, কমিশন, অপারেট, রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য “সহজ ডট কম” এর সাথে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করে। তখন থেকেই সবাই ভেবছে নতুন ডিজাইনের টিকেট আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশের রেলওয়ে। সম্প্রতি সহজ ডট কমের টিকেটের ডায়াগ্রাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে । কিন্তু আফসোস ৯৬ সালের সেই টেকনোহেভেন কোম্পনিরর ডিজাইন থেকে বের হতে পারে নি রেলওয়ে তথা সহজ ডট কম। ড্যানিশ, ইরানী, চায়নিজ কোচগুলোর বিপরীতে এলএইচবি, ইনকা র‍্যাক নিয়ে অধিকাংশ আন্তঃনগর ট্রেনগুলো চলছে, সিঙ্গেল লাইন ডাবল লাইনে উন্নীত হচ্ছে, সিগন্যালিং ব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে, নতুন জেলায় রেল করিডোর তৈরী হচ্ছে। নতুন লোকোমোটিভ আসছে, কিন্তু টিকেটের ডিজাইনের তেমন কোনো পরিবর্তন হলো না। একটি টিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে টিকেট নাম্বার, ট্রেনের কোড+ নাম, প্রারম্ভ-গন্তব্য, ভাড়া, কোচ, আসন, যাত্রার তারিখ ও সময়, টিকেট ক্রয়ের তারিখ ও সময় এবং যাত্রীর প্রয়োজনীয় আনুষাঙ্গিক তথ্যাদি, আর টিকেটের পিছনে বিভিন্ন শর্তাবলী লেখা থাকে। সহজ ডট কম যে অপরিবর্তিত ডিজাইনের টিকেট এনেছে তা নিঃসন্দেহে চীন, জাপান, কোরিয়া, মিয়ানমার, রাশিয়ার টিকেটের থেকে ভালো। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর টিকেট দেখলে আসলেই নিজেদের টিকেটগুলোকে অন্য রকম মনে হয়। তবে টিকেটের ডিজাইনের চেয়ে সহজলভ্য ও যাত্রী সেবার গুরুত্ব সর্বাগ্রে। কিন্তু আমি যেহেতু টিকেট সংগ্রহ করে রাখি তাই আশাছিল নতুন কিছু পাবো হয়তো। একটি টিকেটের জন্য সহজ নিচ্ছে মাত্র ২৫ পয়সা, সর্বোচ্চ ৪ জনের জন্য একটি টিকেট পাওয়া যাবে, যার একই সুবিধার জন্য সিএসএস লিমিটেড নিতো ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। চার আনার টিকেটেও বেশ পরিবর্তন আনা যেতো। ১৮ মাস পরে সহজ তাদের নিজস্ব সার্ভার ব্যাবহার করবে। সিএনএস ৭ বছর পরে টিকেটের রঙের পরিবর্তন এনেছিল, দেখা যাক সহজ ১৮ মাস পরে কিছুটা পরিবর্তন করে কি না, যা নির্ভর করে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ রেলওয়ের উপর।

–নেয়ামুল ইসলাম রিয়াদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here