ঢাকা থেকে প্রথম ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার আসা পর্যটকদের ফুল দিয়ে বরণ

0
183
কক্সবাজারের আইকনিক রেল স্টেশনের ফুল দিয়ে পযটক বরণ করে নেওয়া হচ্ছে। আজ সকালে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনেছবি

রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে গতকাল শুক্রবার রাতে ছেড়ে আসা ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেন আজ শনিবার সকাল আটটায় কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে পৌঁছেছে। কক্সবাজারে আসা প্রথম এই ট্রেনের যাত্রী ছিল ১ হাজার ২০ জন। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ জন ছিলেন পর্যটক। টেন আসার পর রেলস্টেশনে যাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার পথে রওনা দেয় কক্সবাজার এক্সপ্রেস।

আইকনিক রেলস্টেশনের লোকোমাস্টার গোলাম রব্বানি বলেন, ১ হাজার ২০ জন ট্রেনযাত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করে পর্যটকদের বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে স্বাগত জানানো হয়েছে। কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেনে নিরাপদ ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে খুশি পর্যটকেরা।

পর্যটকদের বরণ করে নিতে সকাল থেকে আইকনিক রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ, কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতি, ট্রাফিক পুলিশসহ পর্যটন ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান। ট্রেন থেকে নেমে পর্যটকেরা রেলস্টেশনের বাইরে এলে তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার কার্যালয়ের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তিনি বলেন, পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সেবার মান বাড়াতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

এর আগে গতকাল শুক্রবার দুপুর পৌনে একটার দিকে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ১ হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে প্রথম দফায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস ঢাকায় যাত্রা করেছিল। প্রথম ট্রেনযাত্রার উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ূন কবীর।

স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সৈকত ভ্রমণে আসেন ঢাকার মুগদাপাড়ার ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম (৪৫)। আইকনিক রেলস্টেশন দেখে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এত সুন্দর রেলস্টেশন দেশের কোথাও নেই। নতুন ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভ্রমণ নিরাপদ এবং আরামদায়ক মনে হয়েছে। দুই দিন কক্সবাজার ভ্রমণ শেষে পুনরায় ঢাকায় ফিরে যাবেন তাঁরা।

ট্রেন থামার পর কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশনে নামেন যাত্রীরা। আজ সকালে

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়ায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন ছয়তলাবিশিষ্ট আইকনিক রেলস্টেশন। সহকারী স্টেশনমাস্টার আতিকুর রহমান বলেন, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ১ হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে ২০ বগির কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন পুনরায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট। ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার-ঢাকা যাতায়াতের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আগামী ১০ দিনের সব কটি টিকিট অগ্রিম কাটা হয়ে গেছে। ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথের দূরত্ব প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, রেল চলাচল শুরু হওয়ায় কক্সবাজারের দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। এতে পর্যটন আরও বাড়বে। চাঙা হবে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের নানা খাত।

কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, আজ শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল গেস্টহাউস রিসোর্ট কটেজে পর্যটক আছেন পাঁচ থেকে ছয় হাজার। পর্যটক টানতে কর্তৃপক্ষ কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। পাঁচ শতাধিক হোটেল গেস্টহাউসের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮০ হাজার।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ভাড়া ৬৯৬ টাকা। ঢাকা থেকে রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজার নেমে সারা দিন সমুদ্রসৈকত বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ঢাকা ফেরার সুযোগ রাখা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। রেলস্টেশনে রয়েছে তারকা মানের হোটেল, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকার, ডাকঘর, কনভেনশন সেন্টার, তথ্যকেন্দ্র, এটিএম বুথ, প্রার্থনার স্থানসহ অত্যাধুনিক সুবিধা।

সূত্রঃ প্রথম আলো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here