মেহেদী হাসান,
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদারকে নিয়ে একটি চমৎকার ওয়েবফিল্ম তৈরি হতে পারে।
তৈরি হতে পারে ৫ মার্চের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর নিশ্চিত মিস হয়ে পড়া ভর্তি পরীক্ষাটিতে অংশগ্রহণ করে ফেলার কাহিনীটি নিয়ে! এরকম অসংখ্য লেখা ফেসবুকে ভাসছে। তার এই তড়িৎকর্মের জন্য অবশ্যই প্রসংশা পেতে পারে।
তবে চলচ্চিত্র নির্মান? চমৎকার। চমৎকার।। চমৎকার।।।
বাঙ্গালি আসলে আবেগের স্রোতে ভাসতে পছন্দ করে।
অবশ্যই আপনারা চলচ্চিত্র নির্মান করেন। তবে রেল সেক্টর ও অসীম কুমার তালুকদারের অনিয়ম দুর্নীতিটাও চিত্রনাট্যে সংযুক্ত করবেন।
রেলওয়ে সেক্টরের অনিয়ম- দূর্নীতি। এমনকি একজন অসীম কুমার তালুকদারের ব্যাপারে ওঠা অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ নিমিষেই ম্লান হলে গেলো। তিনি এখন শ্বেত কাঞ্চন ফুলের মতো শুভ্রতা ছড়াচ্ছে। এখন তার দিকে তাকালেই, মনে হবে বরফে ঢাকা শ্বেত-শুভ্র এক হিমালয়।
বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করা হলেও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে রেলওয়ের সেবার মান এখনো উন্নত হয়নি। কাদের জন্য? কারা দায়ী? অসীম কুমার তালুকদাররা যদি এতোই শুভ্রতা ছড়ায়, তবে রেলের এই হাল তো হওয়ার কথা না।
আসেন কিছু কেস স্টাডি করি।
রেল কর্মকর্তা অসীম তালুকদারের বিরুদ্ধে ৪০ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। পশ্চিম রেলওয়ের সংস্থাপন কর্মকর্তা থাকাকালে অসীমের বিরুদ্ধে লোকবল নিয়োগে ব্যাপক নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া প্রধান সংকেত ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশলী থাকাকালে তিনি ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করেন। রাজশাহী শহরের বিভিন্ন ব্যাংকে অসীম ও তার স্ত্রীর নামে ৮৫ লাখ টাকা ডিপোজিট রয়েছে। নগরীর সিপাইপাড়ায় স্ত্রী বন্যা ঘোষের নামে পাঁচ তলা ভবন কিনেছেন। অসীমের বিরুদ্ধে ঘন ঘন সিঙ্গাপুর ভ্রমণের তথ্য রয়েছে। তার বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার সূত্রাপুরে ছেলের নামে ফ্ল্যাট কিনেছেন। ঢাকার বাড্ডা এলাকায় তিনি এক কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে বাড়ি কিনেছেন। মাদারীপুরের নিজ গ্রামে তিনি ১৫০ বিঘা জমি কিনেছেন। এ ছাড়া ঢাকা ব্যাংকের কাকরাইল শাখায় তার নামে ৫৫ লাখ, প্রিমিয়ার ব্যাংক ফকিরেরপুল শাখায় স্ত্রীর নামে ৭০ লাখ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক মিরপুর-১০ শাখায় তার ও স্ত্রীর যৌথনামে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা, এক্সিম ব্যাংক সদরঘাট শাখায় তার নামে ৫০ লাখ টাকা রয়েছে। রাজশাহীর অভিজাত পদ্মা আবাসিক এলাকায় তিনি বাড়ি বানিয়েছেন। এ বিপুল সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে অসীম তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, এত সম্পদ তার নেই। কেউ হয়তো শত্রুতা করে দুদকে এসব অভিযোগ দিয়েছে।
আরেকটি কেস স্টাডি করি।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কেনাকাটায় একটি প্লাস্টিকের প্যাডেলযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়ি (প্যাডেল ডাস্টবিন) কেনার কথা ৩৩৮ টাকায়; কিন্তু একেকটি ডাস্টবিন কেনা হয়েছে ১৩ হাজার টাকা দরে। একইভাবে বাড়তি দাম দেখিয়ে ৪৮৬ টাকার প্রতিটি হ্যাকসো ফ্রেম (ধাতু কাটার করাত) কেনা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা দরে।
প্রতিটি স্লাই রেঞ্চ কেনার কথা ৮৭৮ টাকায়; কিন্তু কেনা হয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ টাকা দরে। একই উপায়ে ৩৫০ টাকার একেকটি কোদাল কেনা হয়েছে ২ হাজার টাকায়, ৩১৩ টাকার বালতি ১ হাজার ৯০০ টাকায়, ২০০ টাকার তালা ৫ হাজার ৬০০ টাকায় এবং ১ হাজার ৬৫০ টাকার পর্দা ১৮ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে।
দুদক এ ব্যাপারে মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘এটিকে আমি এখনো দুর্নীতি বলতে চাই না। অনিয়ম হতে পারে। অডিট আপত্তি সংসদীয় কমিটিতে উঠলে আমরা ব্রডশিট আকারে জবাব দেব। এর পর পিএ কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। কেউ দোষী প্রমাণ হলে তার পেনশন থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা কেটে নেওয়া হবে অথবা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, দশম বিসিএস রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অসীম কুমার তালুকদার। তিনি পর্যায়ক্রমে পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সিপিও, টিআরএম, পশ্চিম রেলের বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম), সিএস ও প্রধান টেলিকম প্রকৌশলী, সরকারি রেল পরিদর্শকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
অসীম কুমার তালুকদার বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন। তার বাড়ি মাদারীপুর জেলায়।
ভাইরে স্রোতের আবেগে গা না ভাসিয়ে, বাস্তবতায় আসুন।
লেখকঃ সম্পাদক ও প্রকাশক
রেল নিউজ ২৪ ডট কম