রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানের দাবিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। সব আয়োজন সম্পন্ন করেও আজ সোমবার (২ ডিসেম্বর) তাই পদ্মা রেলসেতু সংযোগ চালু করতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক আফজাল হোসেন রবিবার (১ ডিসেম্বর) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রবিবার বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান রেলওয়ে মহাপরিচালক আফজাল হোসেনকে এক চিঠিতে কর্মবিরতির কথা জানান।
রেলওয়ের ১৮৩২ সালের আইন অনুযায়ী ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রেনচালক, সহ-চালক, পরিচালক ও টিকিট চেকারদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়। ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এ জন্য তাদের দেওয়া হয় বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।
মাইলেজের হিসাব হলো, প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক বেসিকের সমপরিমাণ টাকা বেশি পাবেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিন ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা দুই-তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হয়। এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয় তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হয়।
কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করে। এর পর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালককে লেখা চিঠিতে মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা আগেই রেলওয়েকে জানিয়েছি, পার্ট অব পে রানিং অ্যালাউন্সের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অসম্মতি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাতিল না হলে প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে ১ ডিসেম্বর থেকে রানিং স্টাফরা ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটি করবেন না। তারা আন্ডার রেস্টে (বিশ্রামকালীন সময়) ডিউটি করবেন না। এ সময় রেলের লোকোমাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) ও সাব-লোকোমাস্টার (এসএলএম) কর্মবিরতিতে যাবেন।
সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) নিয়োগপত্রের দুটি ধারা বাতিল করে একই গ্রেডে কর্মরত রেলওয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে বেতন কাঠামো ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিও জানানো হয়েছে এ চিঠিতে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন রবিবার রাতে বলেন, ‘তাদের কর্মবিরতিতে প্রায়ই বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রা বাতিল করতে হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়েকে। এ নিয়ে রেলওয়েকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। আমি মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সর্বপ্রথম এই ইস্যুটি সমাধান করতে হচ্ছে। রানিং স্টাফদের দাবি-দাওয়া কীভাবে পূরণ করা যায়, তা নিয়ে ভাবছি আমরা।’