Saturday, April 19, 2025

খুলনা-ঢাকা রুটে মঙ্গলবার চালু হচ্ছে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ 

Must read

খুলনা থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার পথে যুক্ত হচ্ছে নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে ট্রেনটি।

পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেলপথ নির্মাণের ফলে ট্রেনে যাতায়াতে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমে গেছে। এই পথে ঢাকা থেকে খুলনায় যাওয়া যাবে পৌনে ৪ ঘণ্টায়। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াতে সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। নতুন এই রুটে দূরত্ব কমার পাশাপাশি সাশ্রয় হচ্ছে সময়, কমেছে ভাড়াও। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত নতুন এই রুটে ট্রেন চলাচলে আনন্দিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। খুশি রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরাও।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এই ট্রেন ঢাকা-খুলনা পথে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ নামে এবং ঢাকা-বেনাপোল পথে ‘রূপসী বাংলা’ নামে নতুন রেলপথ দিয়ে চলাচল করবে। এ ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। বাকি ছয় দিন চলাচল করবে। দিনে দুইবার খুলনা–ঢাকা এবং ঢাকা–বেনাপোল পথে চলাচল করবে ট্রেনটি।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে তিনটি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে দুটি আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস। আর একটি নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। নতুন করে যুক্ত হচ্ছে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এর মধ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হয়ে খুলনায় যাচ্ছে। এতে ৮ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। অন্যদিকে চিত্রা এক্সপ্রেস বঙ্গবন্ধু সেতু হয়েই চলাচল করছে। এই ট্রেনের সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। এর বাইরে বেনাপোল এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া হয়ে যশোরের বেনাপোলে যায়। এতে সময় লাগছে সাড়ে ৭ ঘণ্টা। এ ছাড়া খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে কমিউটার নকশিকাঁথা ট্রেন চলাচল করছে। এটি খুলনা থেকে রাত ১১টায় ছেড়ে যশোর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ভাঙ্গা হয়ে ঢাকায় পৌঁছায় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। এতে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। ফলে নতুন ট্রেনে সময় সাশ্রয় হবে অন্তত ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। এ ছাড়া সুন্দরবন ও চিত্রা ট্রেনের চেয়ে ভাড়াও কম লাগছে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনে। এতে খুশি যাত্রী ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।

রেলের দেওয়া সময়সূচি অনুসারে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস সাপ্তাহিক বন্ধের দিন (সোমবার) ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬টায় খুলনা থেকে ছেড়ে নোয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী জংশন, ভাঙ্গা জংশন হয়ে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। আর ঢাকা থেকে রাত ৮টায় ছেড়ে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনা পৌঁছাবে।

অন্যদিকে একই ট্রেন রূপসি বাংলা এক্সপ্রেস নামে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন (সোমবার) ছাড়া প্রতিদিন ঢাকা থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছাবে দুপুর আড়াইটায়। আর বিকেল সাড়ে ৩টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে যশোর জংশন, নড়াইল, কাশিয়ানী জংশন ও ভাঙ্গা জংশন হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে। ট্রেনের ১২টি কোচে মোট ৭৬৮টি আসন থাকবে।

এদিকে খুলনা-ঢাকার নতুন রুটের ট্রেনের ভাড়াও নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে বিভাগ। ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত ভাড়া পড়বে শোভন চেয়ার ৪৪৫ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ৮৫১ টাকা ও এসি সিট ১০১৮ টাকা।

অন্যদিকে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের মূল্য শোভন চেয়ার ৬৩০ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ১২০৮ টাকা, এসি সিট ১৪৪৯ টাকা ও এসি বার্থ ২১৬৮। আর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের মূল্য শোভন চেয়ার ৬২৫ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ১১৯৬ টাকা ও এসি সিট ১৪৩২ এবং এসি বার্থ ২১৫১ টাকা।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) খুলনা রেলস্টেশনের কাউন্টার থেকে নতুন এই রুটের টিকিট কিনেছেন রূপসার বাসিন্দা কাজী আশরাফুল বারী। তিনি বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর নতুন রুটে ঢাকায় যাত্রার টিকিট কিনেছি। এই রুটে টিকিটের মূল্য কম, ৪৪৫ টাকায় টিকিট কিনেছি। খুব ভালো লাগছে খুলনা থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে স্বল্প সময়ে ঢাকা যেতে পারব ইনশাআল্লাহ।

নগরীর টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা সানাউল হক বাচ্চু বলেন, খুব কম সময়ে খুলনা থেকে ঢাকা যেতে পারব। এটা যেমন আরামদায়ক হবে তেমনি ভাড়াও কম।

ট্রেনের যাত্রী ওলি আহমেদ বলেন, খুলনা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা শুরু হচ্ছে। আগে আমাদেরকে অনেক পথ ঘুরে যেতে হত। এখন সেই সময়টা অনেক কম লাগবে এবং তুলনামূলক সাশ্রয়ীও হবে। এ জন্য আমরা সবাই বেশ খুশি।

মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, এই ট্রেনটি আরও আগে প্রয়োজন ছিল। অনেক লেট হয়ে গেছে। এই ট্রেনে খুবই সুবিধা। এতে খুলনা থেকে গিয়ে ঢাকায় অফিস শেষ করে আবার খুলনায় ফেরা সম্ভব।

ট্রেনের সাব লোকোমাস্টার ইসহাক মল্লিক বলেন, এই ট্রেনে স্বল্প সময়ে খুলনা থেকে ঢাকা যেতে পারবে। এ ছাড়া ট্রেন ভ্রমণ নিরাপদ। যাত্রীরা নিরাপদেই যেতে পারবে আল্লাহর রহমতে।

খুলনা রেলস্টেশনের কর্তব্যরত সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. আল আমিন বলেন, খুলনাবাসীর বহু প্রতীক্ষিত নতুন ট্রেন খুলনা-ঢাকা রুটে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নামে যাত্রা করবে। এতে যাত্রীদের যাত্রা আরামদায়ক হবে। একইসঙ্গে কমবে ভাড়া ও দূরত্ব। বাঁচবে সময়। আশা করি সবাই খুলনা থেকে ট্রেন যাত্রায় আরও আগ্রহী হবেন।

রেলওয়ের ডিভিশনাল ম্যানেজার শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ বলেন, জাহানাবাদ ট্রেনটি খুলনা থেকে কাশিয়ানী ও নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতুর দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। ঢাকা থেকে আবার একইভাবে রাতে খুলনায় এসে পৌঁছাবে। খুলনা থেকে ঢাকা রুটের অন্য ট্রেনের চেয়ে এতে সময় কম লাগবে। মাত্র সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাবে, যা খুলনাবাসীর জন্য একটি বড় সুযোগ। একইসঙ্গে রেলওয়েও গর্বিত যে খুলনাবাসীকে এই সুবিধা আমরা দিতে পারছি। এর মাধ্যমে খুলনাবাসী স্বল্প সময়ে, স্বল্প দূরত্বে এবং স্বল্প খরচে তাদের গন্তব্য ঢাকায় পৌঁছাতে পারবে। এই ট্রেনে ১১টি যাত্রীবাহী কোচ এবং একটি লাগেজ ভ্যান রয়েছে। এই লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে খুলনা এবং আশপাশের জেলার বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বা মালামাল ঢাকায় নিতে পারবে। ব্যাপক পরিমাণে মালামাল বহন করা যাবে। ট্রেনে বিভিন্ন শ্রেণির ৭৬৮টি সিট রয়েছে।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article