Tuesday, April 8, 2025

পূর্বাচলে খাল ভরাট করে বানানো হবে মেট্রোরেলের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড

Must read

ঢাকার প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-১) নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এখন চলছে ডিপো উন্নয়ন ও মাটির নিচে থাকা বিভিন্ন সংস্থার ‘‌ইউটিলিটি’ স্থানান্তরের কাজ।

ঢাকার প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-১) নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এখন চলছে ডিপো উন্নয়ন ও মাটির নিচে থাকা বিভিন্ন সংস্থার ‘‌ইউটিলিটি’ স্থানান্তরের কাজ। মূল মেট্রো লাইন ও স্টেশনগুলোর নির্মাণকাজ শুরুর দ্বারপ্রান্তে। এরই মধ্যে মূল কাজগুলো বাস্তবায়নের জন্য কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের জায়গা নির্ধারণ করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ইয়ার্ডগুলোর একটি পড়েছে কুড়িল এলাকায় পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে-সংলগ্ন দক্ষিণ খালে। খালের জায়গা ভরাট করে অথবা খালের ওপরে পাটাতন দিয়ে এ ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি, যেটি মেট্রোরেল নির্মাণকালীন চার-পাঁচ বছর সময় পর্যন্ত ব্যবহার হবে।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, খালের ওপর পরিকল্পনাধীন ইয়ার্ডটি পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। কারণ ইয়ার্ডটি নির্মাণ হবে খালের একেবারে শেষ প্রান্তে। ফলে পানিপ্রবাহও বিঘ্নিত হবে না। যদিও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, খাল ভরাট করে অবকাঠামো হলে পরিবেশের ওপর অবশ্যই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে ইয়ার্ডটি খালের বদলে অন্য জায়গায় নির্মাণের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

ঢাকার বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে এমআরটি লাইন-১। এর মধ্যে বিমানবন্দর-কমলাপুর অংশের পুরোটাই পাতালপথে হবে। আর নতুনবাজার-পূর্বাচল অংশের সিংহভাগ হবে উড়ালপথে। মেট্রোরেলের চলমান নির্মাণকাজকে কয়েকটি প্যাকেজে ভাগ করেছে ডিএমটিসিএল। এর মধ্যে কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৫-এর মাধ্যমে ট্রানজিশন পয়েন্ট থেকে নতুনবাজার মেট্রোরেল স্টেশনের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত মূল লাইন ও নর্দ্দা মেট্রোরেল স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এ অংশের কাজ বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার হবে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে-সংলগ্ন দক্ষিণ খালের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘‌ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১)’-এর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভায়ও পূর্বাচল খালে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় জানানো হয়, এমআরটি লাইন-১-এর পরামর্শক কর্তৃক কুড়িল এলাকায় পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে-সংলগ্ন দক্ষিণ খালের ওপর পাটাতন করে সিপি-০৫-এর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছে। সভায় বিকল্প ইয়ার্ডের জন্য প্রস্তাবিত খালের পরিবর্তে ভূমিতে অবস্থিত জমির ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে এমআরটি লাইন-১-এর প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম ভূঁঞা বলেন, ‘খালের প্রস্তাবিত অংশের পানি নিষ্কাশন করার পর মাটি ভরাট করে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণ করা যেতে পারে। সভার সভাপতি ও ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, যে প্রক্রিয়ায় ব্যয় সাশ্রয় হবে সেটি অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

খাল ভরাট করে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম ভূঁঞা বলেন, ‘কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডটির কারণে খালের পানিপ্রবাহ বিঘ্নিত হবে না। এটা একেবারে শেষ প্রান্ত। পরিবেশের ওপরও কোনো প্রভাব পড়বে না। আর যদি আমরা করি, আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ দিয়ে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব। পানিপ্রবাহের জন্য রাস্তা রেখেই কাজ করা হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‌এটা রাজউক থেকে অনুমতি নেয়া আছে।’

খাল ভরাট করে নির্মাণের পরিকল্পনায় থাকা কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডটি কতদিন ব্যবহার করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‌চার-পাঁচ বছর। যতদিন কাজ চলবে ততদিন ব্যবহার করা হবে। কাজ যদি আগে শেষ হয়, তাহলে আগেভাগেই আমরা ইয়ার্ডটি উঠিয়ে নিতে পারব। কাজ শেষ করার পর খালটি আগের পজিশনে ফিরিয়ে দেয়া হবে।’

পূর্বাচলে খাল ভরাট করে মেট্রোরেলের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণের বিষয়ে গতকাল পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সেলফোনে কল ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

মেট্রোরেলের কর্মকর্তারা ইয়ার্ডটির কারণে পরিবেশের ক্ষতি হবে না দাবি করলেও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাল ভরাট করে অবকাঠামো হলে অবশ্যই সেটির বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ সম্পর্কে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌জলাভূমি ভরাট করে কোনো ধরনের কাজ করা যাবে না। ওপেন স্পেস ভরাট করে কোনো কিছু করা যাবে না। এরই মধ্যে ফার্মগেটে একটি পার্ক সাময়িক ব্যবহারের জন্য অনুমোদন নিয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এক প্রকার দখলে নিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে পান্থকুঞ্জ পার্ক নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। খাল বা ওপেন স্পেস দখল করে উন্নয়ন কখনই উত্তম চর্চা হতে পারে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌উন্নয়ন আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন। তবে পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন আমরা চাই না। এটা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গেও যায় না। এটা (পূর্বাচল খালে মেট্রোরেলের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড) বন্ধ করতে হবে। কিংবা এটা বাদ দিয়ে অন্য কোথাও জায়গা নিয়ে তাদের করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এমআরটি লাইন-১-এর দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ২ কিলোমিটার। পুরো মেট্রো লাইনটিতে থাকছে ২১টি স্টেশন। লাইনটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০২৬ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article