Saturday, April 19, 2025

ঝুঁকিপূর্ণ রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজে থেমে যায় ২২ জোড়া ট্রেন! 

Must read

পাবনা (ঈশ্বরদী): দেড়শ বছর আগে সেই ব্রিটিশ আমলের কথা। তৎকালীন সরকার পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলের ঈশ্বরদী-রাজশাহী-পার্বতীপুর রেলরুটে নির্মাণ করেছিল ২১৪ নম্বর রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজ।

১৬০ ফুট লম্বা ৮টি স্প্যান বিশিষ্ট ৭ পিলারের ডাবল লাইনের ব্রিজটির আয়ুষ্কাল ব্রিটিশ প্রকৌশলীরা ধরেছিলেন একশ বছর।  

ইটের মাঝে চুন-সুড়কি এবং ভাতের মাড় দিয়ে তৈরি ব্রিজটি নির্মাণ করার পর ব্যবহারের মেয়াদকাল শেষ হয়েছে ৫০ বছর আগেই।  

বর্তমানে চুন-সুড়কির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে বেড ব্লক ও পিলারে ফাটল ধরায় ব্রিজটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ।

বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ গার্ডার ব্রিজের ওপর দিয়ে মাত্র ১০ কিলোমিটার গতিতে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে চলাচলকারী ২২ জোড়া ট্রেন অর্থাৎ যাত্রীবাহী ৪৪টি আন্তঃনগর-মেইল-লোকাল ট্রেনসহ মালবাহী ট্রেন পারাপার করছে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে নির্ধারিত সময় থেকে কিছুটা দেরিতে ট্রেন চলাচল করছে।  

বুধবার (২ জানুয়ারি) সকালে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন- আজিমনগর রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, রেললাইনের মাঝে লাল কাপড়ের ব্যানার টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। দূর থেকে লাল সংকেত দেখে ব্রিজে ওঠার আগেই চালকেরা ট্রেনকে দুই পাশে শূন্য কিলোমিটারে থামিয়ে দিচ্ছেন। পরে চালকরা ওটিপিতে স্বাক্ষর করে ৮০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন না চালিয়ে মাত্র ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনগুলো পারাপার করছে। এতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা দেরিতে ট্রেনগুলো চলাচল করছে। ফলে ভ্রমণপ্রিয় ট্রেন যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।  

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের পরিবহণ কর্মকর্তা (ডিটিও) মোছা. হাসিনা বেগম বাংলানিউজকে জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় ২১৪ নাম্বার ব্রিজের ওপর দিয়ে ২২ জোড়া অর্থাৎ ৪৪টি ট্রেন চলাচল করে। তার মধ্যে ২০ জোড়া আন্তঃনগর ২ জোড়া মেইল ও ২ জোড়া লোকাল রয়েছে। শুধুমাত্র ১২ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা অভিমুখে চলাচল করে।  

ঢাকাগামী আন্তঃনগরগুলো হলো- রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী বনলতা এক্সপ্রেস, সিল্কিসিটি এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, ধূমকেতু, মধুমতি এক্সপ্রেস। পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস, নীল সাগর এক্সপ্রেস, রংপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস, বুড়িমাড়ী থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী বুড়িমাড়ী এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস।  

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন আজিমনগর রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী ২১৪ নাম্বার গার্ডার ব্রিজটি প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো রেলব্রিজ। ব্রিজটি নির্মাণের পর কখনোই সংস্কার হয়নি। ১৬০ ফুট লম্বা ব্রিজটির আয়ুষ্কাল পেরিয়েও ৫০ বছর অতিক্রম করেছে। রেলওয়ে ব্রিজটি নির্মাণের সময় যে ধারণ ক্ষমতা ছিল, কিন্তু এই রেলপথ দিয়ে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে যাত্রীবাহী ৪৪টি  ট্রেন সপ্তাহের একদিন ছাড়া প্রতিদিনই চলাচল করে। এছাড়া অতিরিক্ত লোডের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্রেন যাতায়াত করার কারণে ব্রিজটির পিলার-বেডব্লকগুলোতে ফাটল ধরেছে। ট্রেনগুলো অতিক্রম করার সময় কেঁপে ওঠে পিলারগুলো। দ্রুত ব্রিজটির সংস্কার দরকার। যে ব্রিজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ তখন ডেডস্টপ ঘোষণা করা হয়।  

ডিএন২ বীরবল মণ্ডল আরও জানান, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় সর্বমোট ৫৬১টি বড়-ছোট গার্ডার ব্রিজ ও কালভার্ট ব্রিজ রয়েছে। সবগুলো ব্রিজ সেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি। তার মধ্যে গত বছরে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে ব্রিজ সংস্কার করা হয়েছে। এ বছরে ঈশ্বরদী-রাজশাহী রুটে বড় দুইটি গার্ডার ব্রিজ ও ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর রেলরুটে ছয়টি ব্রিজ নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। ওই আটটি ব্রিজ অতিক্রম করে যে আন্তঃনগর-মেইল-লোকাল ট্রেন ২১৪ নাম্বার ব্রিজ দিয়ে আসা- যাওয়া করে। এই ব্রিজটি এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে।  

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক আসাদ বাংলানিউজকে জানান, মানুষ এখন ট্রেনমুখী। ভ্রমণ নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক হওয়ার কারণেই মানুষ ট্রেনেই চড়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ে যেহেতু একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। নিরাপদে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো যেন চলতে পারে, যেন কোনো অসুবিধাই না হয়। আমরা সব পুরোনো ব্রিজগুলো পরিদর্শন করেছি, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ চিহ্নিত করেছি।

প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক আসাদ আরও জানান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ব্রিজগুলো আমরা প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে সবচাইতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ সংস্কার কাজ শেষ করেছি। পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো সংস্কার করা হবে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো ব্রিজ থাকবে না।  

উল্লেখ্য, ১৮৭৪ সালে ট্রেন চালু হওয়ার পর ভারতের জলপাইগুঁড়ি, দার্জিলিং, শিয়ালদহে ট্রেন চলাচল করতো। সে সময় দার্জিলিং মেইল নামে একটি ট্রেন এ রুটে চলাচল করত। ওই সময় ব্রিজটি নির্মাণ করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article