• একক যাত্রা টিকিট সংকট
• অনেক স্টেশনে ভেন্ডিং মেশিন নষ্ট
• বেড়েছে পকেটমারের উৎপাত
• টিকিট কাটতে দীর্ঘ লাইন, ভাংতি সংকট
• স্টাফদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ
দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে মেট্রোরেলই এখন ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় গণপরিবহন। উত্তরা থেকে মিরপুর হয়ে মতিঝিল রুটে চলা দেশের প্রথম মেট্রোরেল সড়কের দুর্ভোগ কমিয়ে দিয়েছে স্বস্তি। তবে বছর না পেরোতেই অব্যবস্থাপনায় বাড়ছে যাত্রী অসন্তোষ।
অনেক মেট্রো স্টেশনে ভেন্ডিং মেশিন থাকছে নষ্ট। টিকিট কাউন্টারে রয়েছে ভাংতি টাকার সংকট। মেট্রোর ভেতরে অহরহ ঘটছে পকেটমারের ঘটনা। একক যাত্রার টিকিটের সংকট এখনো কাটেনি। যাত্রীদের সঙ্গে মেট্রোর স্টাফরা দুর্ব্যবহার করছেন বলেও রয়েছে অভিযোগ। আবার কখনো যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনো বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে মেট্রোতে যাত্রাও মাঝে মধ্যে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে স্বস্তির মেট্রোরেল যাত্রা দিন দিন হচ্ছে দুর্ভোগের যাত্রা।
মেট্রোরেলের কিছু স্টেশনে মাঝে মধ্যে ভেন্ডিং মেশিনে ত্রুটি দেখা যায়। ত্রুটি পাওয়া মাত্র তা ঠিক করা হয়। প্রতিটি ভেন্ডিং মেশিনেরই ওয়ারেন্টি রয়েছে। ফলে সার্ভিস খারাপ দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিটি টিওএমে পর্যাপ্ত ভাংতি টাকা রাখতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। -ডিএমটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন
মেট্রোরেলের অংশীজনদের অভিযোগ, ওই অব্যবস্থাপনার প্রধান দায় মেট্রোরেলের নির্মাতা ও পরিচালনা সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)। মেট্রোরেল পরিচালনায় তাদের সঠিক তদারকির অভাব রয়েছে। ফলে প্রায় প্রতিদিনই যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। যাত্রী সন্তুষ্টিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন হতে হবে।
তবে ডিএমটিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, মেট্রোরেলে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। ভেন্ডিং মেশিন ঠিক করা, কাউন্টারে পর্যাপ্ত ভাংতি টাকা রাখা, চুরি বা পকেটমার বন্ধে তারা তৎপর। একক যাত্রার টিকিটও আমদানি করা হচ্ছে।
ভেন্ডিং মেশিন নষ্ট
সকাল ১০টা। মেট্রোরেলের শাহবাগ স্টেশন। মতিঝিল ও উত্তরাগামী স্টেশনের টিকিট অফিস মেশিনে (টিওএম) যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। অথচ ওই স্টেশনে চারটি ভেন্ডিং মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে দুটিই নষ্ট। কাছে গিয়ে দেখা গেলো ভেন্ডিং মেশিনে লেখা, ‘লেনদেন প্রক্রিয়াটিতে ত্রুটি আছে। সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করুন। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত।’ তবে যাদের কাছে এমআরটি পাস রয়েছে, তাদের নির্দ্বিধায় স্টেশনে ঢুকতে দেখা যায়।
টিওএমে থাকে না পর্যাপ্ত ভাংতি টাকা
শাহবাগ থেকে মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশনে যাবেন নীলক্ষেতের ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন। টিকিটের জন্য টিওএমে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আলাপকালে মকবুল হোসেন বলেন, মাঝে মধ্যে ব্যবসায়িক কাজে মিরপুর যেতে হয়। তবে যখনই শাহবাগ স্টেশন যাই, তখনই টিকিটের লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। ভেন্ডিং মেশিনগুলো নষ্ট থাকায় এই ভোগান্তি বেশি হচ্ছে। এছাড়া অনেক সময়ই টিওএমে ভাংতি টাকা থাকে না। ফলে টিকিট বা একক যাত্রার টিকিট পেতে সমস্যা হয়।
এরই মধ্যে মেট্রোরেল ঢাকায় যাত্রী পরিবহনে মাইলফলক অর্জন করেছে। তবে যাত্রীসহ অনেকের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডে বেশ কয়েকবার মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বিষয়গুলো সমাধানে জনসচেতনার বিকল্প নেই। এর বাইরে কারিগরি ত্রুটি থাকলে ডিএমটিসিএল তাৎক্ষণিক তা সমাধান করে।- ডিএমটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন
টিওএমে পর্যাপ্ত ভাংতি টাকা রাখা হয় না কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে স্টেশনের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহবাগ মেট্রো স্টেশনে দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, যারা নিয়মিত মেট্রোতে যাতায়াত করেন, তাদের অধিকাংশই এমআরটি পাস নিয়েছেন। তবে যারা মাঝে মধ্যে যাতায়াত করেন, তারা ভেন্ডিং মেশিন বা টিওএম থেকে একক যাত্রার টিকিট নেন। কিন্তু মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে এক-তৃতীয়াংশ ভেন্ডিং মেশিন নষ্ট। এগুলো একটা ঠিক করলে আরেকটা নষ্ট হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন বলেন, ‘মেট্রোরেলের কিছু স্টেশনে মাঝে মধ্যে ভেন্ডিং মেশিনে ত্রুটি দেখা যায়। ত্রুটি পাওয়া মাত্র তা ঠিক করা হয়। প্রতিটি ভেন্ডিং মেশিনেরই ওয়ারেন্টি রয়েছে। ফলে সার্ভিস খারাপ দেওয়ার সুযোগ নেই।’
টিওএমে পর্যাপ্ত ভাংতি টাকা না রাখার বিষয়ে মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন বলেন, মেট্রোরেলের প্রতিটি টিওএমে পর্যাপ্ত ভাংতি টাকা রাখতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
একক যাত্রার টিকিট সংকট
মেট্রোরেলে যাত্রীদের জন্য দুই ধরনের টিকিট রয়েছে—একটি এমআরটি পাস বা র্যাপিড পাস, অন্যটি একক যাত্রার টিকিট। র্যাপিড পাস কেনা যাত্রীরা টাকা না শেষ হওয়া পর্যন্ত যে কোনো সময় যাত্রা করতে পারেন। আর একক যাত্রা করা যাত্রীদের স্টেশন থেকে তাৎক্ষণিক টিকিট কিনে যাত্রা করতে হয়। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় সেই টিকিট ফেরত দেওয়া বাধ্যতামূলক।