Monday, April 21, 2025

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনায় ঠিকাদার নিয়োগ বন্ধ ৫ বছর  

Must read

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে গত পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ক্যাটারিং সার্ভিস (খাবার সরবরাহ) পরিচালনায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম। ১৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর পূর্বাঞ্চলের ২৬টি ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা করে আসছে। ২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে ক্যাটারিং সার্ভিসে দায়িত্ব পাওয়া এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়নি। যে কারণে পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোরই বারবার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা (বাণিজ্যিক) মো. মামুন মিয়া বলেন, ‘১৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আন্তনগর ট্রেনে ক্যাটারিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। সেগুলোর মধ্যে খাবারের বগিতে বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে চারটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ২০২০ সালের পর থেকে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য নতুন করে টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে না। যে কারণে পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোরই প্রতি বছর নবায়ন করা হচ্ছে।’

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘২০২৩ সালে নতুন করে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ ও নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে নতুন এবং পুরনো মিলে ৪৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছিল। সেগুলোর মধ্যে ৪২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ৫০ হাজার টাকা অফেরতযোগ্য অর্থ জমা দিয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে ৩৭টিকে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে আবেদনকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে। ওই পাঁচ প্রতিষ্ঠান থেকে একটি প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করে। মামলাটি এখনও চলমান আছে। মামলা শেষ না হওয়ার কারণে ক্যাটারিং সার্ভিসের নতুন ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার আহ্বান করা যাচ্ছে না।’

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চলাচলকারী ক্যাটারিং সার্ভিসের (খাবার সরবরাহ) দায়িত্বে আছে ১৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেগুলোর মধ্যে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে মেসার্স হাবিব বাণিজ্য বিতান; মহানগর ও মেঘনা এক্সপ্রেসে মেসার্স বিল্লাল হোসেন ব্রাদার্স অ্যান্ড কোং; মহানগর প্রভাতী ও তূর্ণা নিশিথা ট্রেনে মেসার্স সিরাজ মিয়া রেলওয়ে ক্যাটারার্স; যমুনা, অগ্নিবীণা, এগার সিন্ধুর প্রভাতী, এগার সিন্ধুর গোধুলী এক্স্রপ্রেস ট্রেনে মেসার্স নিউ টিপটপ ক্যাটারার্স; পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে মেসার্স ওবায়দুল হক অ্যান্ড সন্স; জয়ন্তিকা, উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে মেসার্স আবদুল্লাহ অ্যান্ড সন্স ও শরীফ হোটেল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড ক্যাটারার্স; চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে মেসার্স ওয়াহদিকা সার্ভিসেস; ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনে মেসার্স কে আর ক্যাটারার্স; তিস্তা এক্সপ্রেসে শাহ আমানত এন্টারপ্রাইজ; উপকূল এক্সপ্রেসে মেসার্স সুরুচি ফাস্টফুড এবং মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে নুর ট্রেডার্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের কারণে বর্তমানে ক্যাটারিং সার্ভিস বন্ধ আছে মহানগর গোধূলী ও তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে। এসব ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা করতো মেসার্স প্রগতি ক্যাটারার্স। বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে চলাচল করা পাহাড়িকা, উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন। এ ট্রেন দুটিতে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা করে এস এ করপোরেশন।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, খাবার বগিতে বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহন করায় মহানগর গোধূলী (৭০৩) এবং তূর্ণা এক্সপ্রেস  (৭৪২) ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস বাতিল করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। গত বছরের ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।

অপরদিকে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে ধর্ষণের অভিযোগে উদয়ন-পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিসের দায়িত্বে থাকা এস এ করপোরেশনের কার্যক্রম স্থগিত করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত বছরের ২৬ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের খাবার বগিতে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। এ মামলার তদন্ত কাজ এখনও চলমান আছে।’

চট্টগ্রাম রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ‘মহানগর গোধূলী, তূর্ণা, পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে বর্তমানে ক্যাটারিং সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এসব ট্রেনের যাত্রীরা ক্যাটারিং (খাবার) পাচ্ছেন না। এসব ট্রেনে খাবার সরবরাহে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া যাচ্ছে না। নানা কারণে নতুন করে কোনও প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বও দেওয়া যাচ্ছে না।’     

নুরুল আমিন নামে এক ক্যাটারার জানান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ১৬টি প্রতিষ্ঠান ২৬টি ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা করছে। এর মধ্যে নানা অনিয়মের কারণে তিনটি প্রতিষ্ঠানের ক্যাটারিং সার্ভিস কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। প্রতিবার রেলওয়ের ক্যাটারার নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট কমিটি যাচাই-বাছাই করে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে। কিন্তু গত চার বছর ধরে পূর্বাঞ্চল ট্রেনে টেন্ডারবিহীন ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা করছে আগের ১৬টি প্রতিষ্ঠান। যাদের লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে শেষ হয়। অদৃশ্য কারণে নতুন ট্রেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, ক্যাটারিং সার্ভিস একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। যে মামলাটি আছে সেটি নিষ্পত্তির জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তেমন জোরালো ভূমিকা রাখছে না। 

এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আইন কর্মকর্তা মো. আল মাহমুদ বলেন, ‘পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন অভিযোগে কমপক্ষে এক হাজার ৪০০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা পরিচালনা করা হচ্ছে আইন দফতর থেকে। এর মধ্যে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা নিয়ে করা মামলাটিও আমরা পরিচালনা করছি।’

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article