ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দুটি প্রকল্পে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ভারত ঋণ ছাড় করেনি। ফলে নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি।
অন্যদিকে রেলওয়েতে ভারতীয় ঋণে দুটি প্রকল্পের কাজ চলছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই দুই প্রকল্পে কর্মরত ভারতীয়রা বাংলাদেশ ছাড়েন। সবাই ফেরেননি। ফলে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি।
রেলওয়েতে এখন ভারতীয় ঋণে চলমান, অর্থাৎ প্রক্রিয়াধীন ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সংখ্যা সাত। আগে উল্লেখ করা চারটির বাইরে দুটি প্রকল্পের কাজ শেষ, কিন্তু চূড়ান্তভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়নি। একটি প্রকল্প একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, দুই প্রকল্পে ভারত আসলেই অর্থায়ন করবে কি না, তা জানাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। ভারত এখনো কিছু জানায়নি। বাংলাদেশ মনে করছে, ভারতীয় ঋণ পাওয়া না-ও যেতে পারে। সরকার বিকল্প অর্থায়নের কথাও ভাবছে।
এদিকে প্রকল্প নেওয়া এবং কাজ শুরু করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। এতে ব্যয় বাড়ছে। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে কাজের পরিমাণ বাড়ানোর কারণে ব্যয় বেড়েছে।
যে দুই প্রকল্পে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ছয় বছর পেরিয়ে গেছে, তার একটি বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত মিশ্র গেজ রেললাইন নির্মাণ। এই পথে রেললাইন না থাকায় ট্রেনগুলোকে সান্তাহার, নাটোর ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে ঢাকার পথে চলাচল করতে হয়। এতে প্রায় ১২০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হয়।
বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ৮৬ কিলোমিটার নতুন মিশ্র গেজ রেলপথ নির্মাণে ২০১৮ সালে প্রকল্প নেওয়া হয়। শুরুতে নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সম্ভাব্যতা যাচাই ও চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নে লেগে যায় গত বছরের জুন পর্যন্ত।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ কারণে ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ৩০ কোটি ডলার (প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা) বাড়তি অনুমোদনের জন্য ভারতকে চিঠি দেয়। সাড়া না পেয়ে গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর পুনরায় চিঠি দেয় ইআরডি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, শুরুতে প্রকল্পের অধীনে যেসব কাজ করার কথা ছিল, সেই অনুযায়ী সার্বিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কাজ বেড়েছে। ফলে অগ্রগতি মাত্র ৩৮ শতাংশ। শুরুতে প্রায় ৭১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করার কথা ছিল। পরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৮ কিলোমিটার। রেলপাতের ওজনও পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর ইআরডির মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। এতে অর্থায়নের বিষয়ে এক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। নইলে বিকল্প উৎস থেকে অর্থায়নের চেষ্টা চালানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
বর্তমানে এই প্রকল্পে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মী বাংলাদেশে নেই বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। অর্থাৎ প্রকল্পের কাজ এখন পুরোপুরি বন্ধ আছে। এর মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক, রেল ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, রেল, বিদ্যুৎসহ সব খাতেই ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের গতি ধীর। অর্থায়ন–সংক্রান্ত জটিলতাও রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।