সেলিমুর রহমান: পাওয়ার কারে (বৈদ্যুতিক বগি) উঠতে না দেওয়ায় ট্রেনে ঢুকে আব্দুর রহিম নামের এক রেলকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। হামলার পর ছিনিয়ে নেওয়া হয় তার মোবাইল ও সঙ্গে থাকা নগদ টাকা।
শনিবার (৫ এপ্রিল) ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে পৌঁছালে একদল তরুণ ট্রেনের পাওয়ার কারে প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় পাওয়ারকার অপারেটর এর দায়িত্বে থাকা আব্দুর রহিম তাদের বাধা দেয়। এ নিয়ে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে আব্দুর রহিমের ওপর চড়াও হয় হামলাকারীরা। এসময় পাওয়ারকারে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেন আব্দুর রহিম। পরে ট্রেনের জানালা দিয়ে ট্রেনে ঢুকে আব্দুর রহিমকে পেটাতে শুরু করে হামলাকারীরা।
সবশেষ ট্রেনের অন্যান্য স্টাফরা এসে আব্দুর রহিমকে উদ্ধার করে। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুর রহিম রেল নিউজকে বলেন, মাদক সেবনের উদ্দেশ্যে আখাউরা যাওয়ার জন্য একদল মাদকসেবি জোর করে উঠতে চায়। আমি বাধা দিলে আমাকে মারধর করে। স্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আমি শনাক্ত করতে পারবো। কারা এই হামলার সাথে জড়িত।
এর আগে গত ৩ এপ্রিল মাহুয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে পাওয়ার কার থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ওই বগিতে চলাচল নিয়ন্ত্রণে একটি কন্ট্রোল অর্ডার জারি করে রেল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে এঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে রেলওয়ে বিদুৎ শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির উপদেষ্টা জাকির আহমেদ বলেন, ট্রেনে অবৈধ যাত্রীদের নজর থাকে পাওয়ার কার ঘিরে। উঠতে না দিলেই পাওয়ার কার অপারেটররা মারধরের শিকার হন। পূর্বেও আমাদের সহকর্মী নাছিম, করিম, বদিউল আলম, ফরহাদ রনি সহ আরো অনেকেই একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটলেও বিচার কিংবা রেল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কোনটাই পাওয়া যায় না।
শুধু পাওয়ারকারে অবৈধ যাত্রী ভ্রমন করে না! পুরো ট্রেন জুড়েই অবৈধ যাত্রী ট্রেন ভ্রমন করে। কর্তৃপক্ষ অবৈধ যাত্রী ট্রেনে না উঠার কোন আদেশ করলেই পুরো ট্রেনে বিভিন্ন কোচে থাকা অবৈধ যাত্রীদের কে সেইফ রাখে আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হতে শুরু করে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ এসে পাওয়ারকার ভিডিও করে বিভিন্ন হুমকি- ধামকি দিতে থাকে। তাই বৈষম্য সৃষ্টি না করে সবাইকে সমান চোখে দৃষ্টি ও সজাগ থাকতে হবে। এখন থেকে যার যার অবস্থান হতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ট্রেনের অনিয়ম ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হবে।
তাছাড়া আব্দুর রহিমের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এ শ্রমিক নেতা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে রেলওয়ের কয়েকজন স্টাফ জানিয়েছেন, মাহুয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের পর পাওয়ার কারে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করতে বলা হয়েছে। পাওয়ার কার থেকেই ট্রেনে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হয়। স্পর্শকাতর ওই বগিতে যাত্রী পরিবহন সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু অনেকেই জোর করে উঠতে চান। ট্রেনে দুর্ঘটনা এড়াতে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে রেল কর্মীদের নিরাপত্তাও জোরদার করতে হবে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন৷ যার ফলশ্রুতিতে এই বিভিন্ন সময় হামলার ঘটনা ঘটছে।
রেলওয়ে বিদ্যুৎ শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের উপদেষ্ঠা ও সমন্বয়কারী জাকির আহমেদ রেলনিউজকে বলেন, আমরা নিরাপত্তা চাই। পূর্বেও আমাদের কর্মীরা এরকম আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু হামলার কোন বিচার আমরা পাইনি। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো: সুবক্তগীন রেল নিউজকে বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিআরএম ঢাকাকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি। আগামীকাল এজাহার দাখিল করা হবে। পাশাপাশি ভৈরব, আখাউড়া, ব্রাহ্মনবাড়িয়া এই অঞ্চলে যাতায়াতের সময় পাওয়ার কারে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।