Friday, April 25, 2025

নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর ইলেকট্রিক ট্রেনের উদ্যোগে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়তে পারে এমআরটি-৪ প্রকল্প

Must read

বাংলাদেশে রেলওয়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে ১৬ সেট বৈদ্যুতিক কমিউটার ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়ার ফলে বাতিল হতে পারে ঢাকার কমলাপুরের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জকে যুক্ত করার জন্য প্রস্তাবিত এমআরটি লাইন-৪ প্রকল্প। কারণ, বৈদ্যুতিক কমিউটার ট্রেনে খরচ অনেক কম হবে।

কর্তৃপক্ষের প্রাক্কলন অনুসারে, বৈদ্যুতিক কমিউটার ট্রেন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা—অন্যদিকে এমআরটি-৪-এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা।  

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পরিকল্পনা বদলের এ ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।

ওই সভার কার্যাবিবরণীতে বলা হয়েছে, এমআরটি-৪ একটি ‘কন্ডিশনাল’ প্রকল্প ছিল। এ প্রকল্প রেলওয়ের নিজস্ব সম্প্রসারণ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ওপর নির্ভরশীল।

সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুসারে, রেলওয়ে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রেল ট্র্যাককে ডাবল লাইন ও কমিউটার সার্ভিসে সম্প্রসারিত করলে এমআরটি-৪ বাস্তবায়নের প্রয়োজন পড়বে না।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, চলমান একটি প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ডাবল লাইনের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত বৈদ্যুতিক কমিউটার ট্রেন চালু করতে প্রস্তুতিমূলক কাজও শেষ পর্যায়ে।  

পরিকল্পনা কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এমআরটি-৪ নির্মাণে যে ব্যয় হবে, তার ১০ ভাগের একভাগ খরচে এই রুটে বৈদ্যুতিক কমিউটার ট্রেন চালু করা যাবে। ‘এছাড়া ইলেকট্রিক কমিউটার ট্রেনে  প্রতি ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারবে।’

এদিকে ১৯ মার্চ ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তারের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগপর্যন্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষাসহ এমআরটি লাইন ৪-সংক্রান্ত সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

ওই সভার কার্যবিবরণী অনুসারে, নীলিমা আক্তার ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) প্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসা করেন, এমআরটি-৪ প্রকল্প বাস্তবায়ন বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না, অথবা অনুমোদন প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে রয়েছে।

তখন জানানো হয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনের যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই কেবল বিদেশি সহায়তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করা সরকারি তহবিলের অপচয় বা অপব্যবহারের ঝুঁকি তৈরি করে।

নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর রুটে বৈদ্যুতিক কমিউটার ট্রেন

নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ট্রেনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। 

প্রথম পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ-কমলাপুর-জয়দেবপুর রুটে ২৬ সেট বৈদ্যুতিক কমিউটার ট্রেন চালু করা হবে। এ পর্যায়ের কাজে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

তিনি জানান, ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে জয়দেবপুরসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম পর্যন্ত মোট ৩৪৮ কিলোমিটার অংশের সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশার কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া বৈদ্যুতিক রোলিং স্টকের স্পেসিফিকেশনের কাজও শেষ হয়েছে।  

‘এখন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে। আগামী মাসে প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। একইসঙ্গে বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ করতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে পাঠানো হবে,’ বলেন হাবিবুর।

জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এই প্রকল্পে সমীক্ষা পরিচালনা করেছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হবে ২৭.১৬ মিলিয়ন ডলার। একটি ওয়ার্কশপ নির্মাণে ব্যয় হবে ৩২ মিলিয়ন ডলার এবং রোলিং স্টক সংগ্রহে ব্যয় হবে ১৯৬ মিলিয়ন ডলার। 

সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী , ২০২৬ সালের মধ্যে প্রথম প্রর্যায়ের কাজের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই রুটে  ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনে কমিউটার ট্রেন চালু হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৮ সালে। ৩০, ২০, ১৫ ও ১০ মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন পরিচালনার চারটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। 

এই কমিউটার ট্রেনে শুধু যাত্রী পরিবহন করা হবে। আর নারায়ণগঞ্জ থেকে জয়দেবপুর যেতে সময় লাগবে ৫০ মিনিট।

এমআরটি লাইন ৪-এর কী হবে?

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে আরএসটিপির (২০১৫-২০৩৫) একটি মধ্যমেয়াদি পর্যালোচনা চলছে।

তারা বলেন, পরিকল্পনার আপডেটেড সংস্করণে এমআরটি-৪-এর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওই পরিকল্পনায় যাত্রীর সংখ্যা, কার্বন নির্গমন, ভ্রমণের সময় সাশ্রয় ও পরিচালন ব্যয়ের মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে রুট বাছাই মূল্যায়ন করা হবে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) তথ্য অনুযায়ী, কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত উড়াল ও পাতাল ট্র্যাকের সমন্বয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার এমআরটি-৪ নির্মাণ এখনও প্রস্তাবাধীন। এ লক্ষ্যে  সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য ২০২৪ সালের মে মাসে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলমান রয়েছে।

বর্তমান পরিকল্পনা অনুসারে, এ রুটে কমলাপুর-যাত্রাবাড়ী অংশে মেট্রোরেল মাটির নিচ দিয়ে যেতে পারে (আন্ডারগ্রাউন্ড)। এছাড়া কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করতে হবে। 

কাঁচপুর থেকে মদনপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলে রুটটি হবে এলিভেটেড। প্রাথমিক হিসাবে এমআরটি-৪ নির্মাণে ৩০ হাজার কোটি ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করছে ডিএমটিসিএল। তবে সবকিছু চূড়ান্ত হবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পর।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article