Monday, April 28, 2025

দু’বছরেও পুরোদমে চালু হয়নি কক্সবাজারের রেলস্টেশন, যাত্রীর বিশ্রাম কক্ষে তালা

Must read

দুই বছরেও পুরোদমে চালু হয়নি কক্সবাজার রেলওয়ে আইকনিক স্টেশন। বর্তমানের একটি কাউন্টার দিয়ে চলছে কার্যক্রম। স্টেশনের ভেতরে ম্যানেজার ও মাস্টারসহ কয়েকটি কক্ষে অফিসের কাজ ও ট্রেন চলাচল তাদরকি করা হচ্ছে। তবে ২৯ একর জমিতে নির্মিত ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুটের দৃষ্টিনন্দন ছয়তলা ভবনের এই রেলস্টেশনের সামনে ও পেছনের দরজা রয়েছে তালাবদ্ধ। যাত্রীরা পাশের একটি ছোট গলি দিয়ে যাতায়াত করেন। এছাড়া স্টেশনের পাশে নির্মিত ভিআইপি রেস্টহাউজ, কর্মচারীদের আবাসন ও তিনটি চলন্ত সিঁড়ি অব্যবহৃত পড়ে আছে। যাত্রীদের বিশ্রাম ও অপেক্ষার জন্য নির্মিত কক্ষগুলোর তালাবদ্ধ পড়ে আছে। এখনও প্রকল্পটি বুঝে পায়নি রেলওয়ে।

দু’বছরেও পুরোদমে চালু হয়নি কক্সবাজারের রেলস্টেশন, যাত্রীর বিশ্রাম কক্ষে তালা 1

তবে কর্মচারীদের আবাসন ভবনে রেলওয়ে ক্যাটারিং খাবার তৈরি হচ্ছে এবং সেখানে বসবাস করছেন প্রায় ৪০ জন কর্মচারী।

দু’বছরেও পুরোদমে চালু হয়নি কক্সবাজারের রেলস্টেশন, যাত্রীর বিশ্রাম কক্ষে তালা 2

জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিআরইসি)’ ও ‘বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি’ এবং ‘চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি)’ ও ‘বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’ দুই ভাগে কাজ করে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও নির্মাণে ধীরগতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে শুধুমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণের বিপরীতে খরচ হয় প্রায় ২১৫ কোটি টাকা।

২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করা হয়। শুরুতে ঢাকা থেকে একটি আন্তঃনগর ট্রেন ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ চলাচল করলেও বর্তমানে ঢাকা থেকে ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ এবং চট্টগ্রাম থেকে ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’ ও ‘সৈকত এক্সপ্রেস’ দিনে ৮ বার আসা-যাওয়া করছে। সে হিসেবে দৈনিক প্রায় ১৬ হাজার পর্যটক এসব ট্রেনে যাতায়াত করছেন।

কিন্তু এ দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার পৌঁছার পর পর্যটকরা কোনো বিশ্রাম নিতে পারেন না। তাদের দ্রুত লাগেজ নিয়ে ছুটতে হয় সমুদ্র সৈকতের দিকে।

ঢাকা থেকে ব্যাংকার আবদুল হান্নান সপরিবারে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন। দুর্ভোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এতদূর পথ এসে স্টেশনে একটু বিশ্রামের সুযোগ নেই। এসেই রিকশাওয়ালার টানাহেঁচড়ার শিকার হতে হচ্ছে। হোটেল পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্রাম করার সুযোগ নেই।’

গত ১৩ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা গেছে, স্টেশনের সামনে-পেছনে সবকটি গ্লাসের দরজা তালাবদ্ধ। স্টেশন ভেতরে নিচতলায় যাত্রীদের জন্য ২৫টি চেয়ার বসানো হলেও কক্ষ বন্ধ থাকায় এগুলো খালি পড়ে আছে। একই অবস্থা টিকিট কাউন্টারেরও। এছাড়া নিচতলায় এটিম বুথের জন্য নির্ধারিত খালি জায়গা, ঔষধালয়, ডাকঘর, রেলওয়ে পরিষেবা অফিস, লাগেজ লকার এবং দ্বিতীয় তলায় লকার, নামাজের জায়গা, বিক্রয় কেন্দ্র ও ক্যাফে বন্ধ অবস্থায় খালি পড়ে আছে।

আরও দেখা গেছে, ৩য় তলায় বিপনি কেন্দ্র ও রেস্টুরেন্ট, ৪র্থ তলায় পর্যটকদের জন্য নির্মিত নৈশযাপন কক্ষ, ৫ম তলায় অফিস ও রেস্টুরেন্টের জায়গা এবং ৬ষ্ঠ তলায় মিলনায়তন খালি পড়ে আছে। স্টেশনের পাশেই রয়েছে পাওয়ার হাউজ। এখান থেকে পুরো স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। স্টেশনের দুটি চলন্ত সিঁড়ি, লিফট ও ভিআইপি লিফটও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

এছাড়া রেললাইনের ওপর যাত্রীদের পারাপারের জন্য স্থাপিত তিনটি স্ক্যাবেটর লিফট কয়েক বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে। ফলে অনেক অসুস্থ রোগীকে তিন তলার সিঁড়ি মারিয়ে ফুটওভার ব্রিজ পার হয়ে প্লাটফর্মের পৌঁছাতে হচ্ছে।

স্টেশনের পাশেই নির্মিত হয়েছে ভিআইপিদের জন্য রেস্ট হাউস ও কর্মচারীদের আবাসন। সেখানে দেয়ালগুলো ঘাস, লতাপাতায় ভরে গেছে। ভিআইপিদের জন্য নির্মিত পাঁচতলার রেস্টহাউজটিও তালাবদ্ধ। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় গ্রিল, দরজা, জানালায় জং ধরেছে। এর পাশেই কর্মচারীদের জন্য নির্মিত হয়েছে ১০০০ বর্গফুটের ৪ তলা করে ৩টি ভবন, এগুলোও তালাবদ্ধ। একইভাবে ১২০০ বর্গফুটের ৩ তলা ১টি ভবন, ৬০০ বর্গফুট ৫ তলা ৫টি ভবন, ৮০০ বর্গফুটের ৫ তলা ৪টি ভবন তালাবদ্ধ পড়ে আছে। প্রত্যেক ভবনের প্রতি তলায় দুটি করে ইউনিট।

রেলস্টেশনের বিভিন্ন কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব ভবন নির্মাণের কয়েক বছর পার হলেও প্রকল্প এখনও রেলওয়েকে হস্তান্তর করা হয়নি।

তবে ‘বি-২’ নামের ৫ তলার একটি ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় চার ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিসের জন্য রান্না করা হচ্ছে। প্রায় বড় সাইজের ১৫-২০টি গ্যাস সিলিন্ডারে এসব রান্নার কাজ চলছে। নিয়ম না মেনে ক্যাটারিং সার্ভিসের প্রায় ৪০ জন কর্মচারী এখানে বসবাস করছেন।

ক্যাটারিং সার্ভিসের ম্যানেজার পরিচয়ে আবদুর রহিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা এখানে থাকি ও রেলের ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা করি। তবে এখানে রান্নার বিষয়টি অস্বীকার করেন।’

তিনি আরও বলেন, বাসাগুলো তাদের মালিক রেলওয়ে থেকে নিয়েছে। তবে কিভাবে নিয়েছে জানি না।

বসবাসরত কর্মচারীরা নিজেদের রেলওয়ের লোক দাবি করলেও মিজান নামের একজনের কাছ থেকে বেতন নেন তারা। এছাড়া শাকিল নামের একজন শ্রমিকও নিজেকে রেল কর্মচারী দাবি করেন। তবে দু’জনেই স্বীকার করেন, তারা রেলওয়ে নয়, ব্যক্তির অধীনে চাকরি করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাপরিচালক ও কক্সবাজার-দোহাজারী প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, ‘কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু করা হয়েছে। স্টেশন আবাসনসহ সবকিছু চালুর জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে বাণিজ্যিকভাবে তা ছেড়ে দেওয়া হবে। আবাসনগুলোও একই সময়ে চালু হবে।

আবাসনে রেলওয়ের ক্যাটারিং সার্ভিসের রান্না করা ও লোকজন বাস করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানান।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article