Wednesday, October 22, 2025

শূণ্য কার্বন নিঃসরণ বৈশ্বিক অঙ্গীকার : বাংলাদেশ রেলওয়ের সুযোগ ও সম্ভাবনা

Must read

মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান পাটওয়ারী

জীবাশ্ম ( খনিজ ) জ্বালানি মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে অফুরন্ত অবদান রেখেছে এতে কোন সন্দেহ নেই । তেমনি জীব বৈচিত্র্যময় মানুষের একমাত্র আবাসস্থল এ পৃথিবীকে বসবাসের অনুপযোগী করার উপাদান হিসেবেও চিহ্নিত হচ্ছে পৃথিবীর ভূ – গর্ভস্থ এ জীবাশ্ম জ্বালানি ।
সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্ট সব কিছুর প্রয়োজন সম্পর্কে অবগত এবং ব্যবস্থাপক । জ্বালানি ব্যবহারে আমরা যে বিদ্যুৎ , তাপ , আলোক শক্তি পাই তা সৃষ্টিকর্তা গ্রহ – নক্ষত্র সমূহে অফুরন্ত ভাবে দিয়ে রেখেছেন । মানুষের প্রয়োজন তার জ্ঞান ও কৌশল খাঁটিয়ে তা কার্যোপযোগী করা ।
আধুনিক জীবন যাপনে জীবাশ্ম জ্বালানি হতে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ , আলো , শক্তির বিকল্প উৎস খুঁজে বের করা আজ সময়ের সবচেয়ে বড়
দাবি 1
১৯২ মে.টন কয়লা , ৪৩৮ মে.টন ফার্নেস অয়েল এবং ৫৩৯০৯ মে.টন ডিজেল ( বি.আর. ইনফরমেশন বুক ২০১৯ ) জ্বালিয়ে পরিচালিত বাংলাদেশ রেলওয়েকে শূন্য কার্বন টার্গেটে পৌঁছাতে হলে এসব কার্বন জ্বালানি সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করতে হবে । তাহলে উপায় কি ? উপায় বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন । ইতিমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথ , ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পে বিদ্যুৎ চালিত ট্রেনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে । ভবিষ্যতে শূন্য কার্বনের নিঃসরণে উন্নীত হতে হলে সকল রেল ট্র্যাক বৈদ্যুতিক সিস্টেমে রূপান্তর করতে হবে । বৈদ্যুতিক রেল ট্র্যাকশান মানে কার্বন নিঃসরণ মুক্ত রেল ব্যবস্থা তা কিন্তু নয় । আমাদের বর্তমান উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় পুরোটাই কার্বন জ্বালানি নির্ভর অর্থাৎ খনিজ তেল , গ্যাস , কয়লা জ্বালিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ । টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থা গড়তে হলে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে স্রষ্টার অবারিত ঢেলে দেওয়া সৌর আলো , পানি এবং বায়ু প্রবাহ থেকে ।
সৌর তাপ বিদুৎ শক্তির এক অফুরন্ত উৎস । বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌর শক্তির ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে । ইতিমধ্যে চীন ১০০ KMW সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে । পৃথিবী নামক এ গ্রহে আমরা যদি আরও কয়েক প্রজন্ম পরম্পরায় বসবাস করতে চাই । তবে আমাদের এখনই পেট্রোলিয়াম জ্বালানি মুক্ত হতে হবে । আশার কথা COP 26 সামিটে বিশ্বের বড় ছোট প্রায় সকল দেশ ২০৫০ হতে ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় আনার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পেরেছে ।
কার্বন নিঃসরণ মুক্ত জ্বালানি ব্যবস্থা গড়তে আমাদের রয়েছে বিশাল চ্যালেঞ্জ । কারণ মাত্রাতিরিক্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় আমাদের খাদ্য উৎপাদন বহির্ভূত ভূমি খুবই কম । হাইড্রো ইলেকট্রিসিটির জন্য প্রয়োজন খরস্রোতা নদীসহ বিশাল জলাভূমি , সৌর বিদ্যুৎ এর জন্যে প্রয়োজন রৌদ্রময় পতিত ভূমি । বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতাধীন অনাবাদি বেশ কিছু ভূমি রয়েছে যাতে খাদ্য শষ্য উৎপাদন করা হয় না বা কৃষি কাজে ব্যবহার হয় না । অন্যদিকে আছে বেশ কিছু বিশাল আকারের ওয়ার্কসপ রূপশেড । এসমস্ত উন্মুক্ত ভুমি ও ওয়ার্কসপ রূপশেড সৌরবিদ্যুতের জন্য ব্যবহার করে উৎপাদন করা যায় দৈনিক ৫০০ মেগাওয়াট বা তার চেয়ে অধিক বিদ্যুৎ । রেলওয়ের সকল অপারেশনাল কাজে উক্ত বিদ্যুৎ পিডিবির ট্রান্সমিশানের মাধ্যমে ব্যবহার করে উদ্বৃত্ত অংশ পিডিবি নিকট বিক্রি করা যেতে পারে অথবা পিপিপি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে মুলধন সমন্বয় করা যেতে পারে ।চট্টগ্রামের ফয়’স লেকে রেলওয়ের ভূমির রয়েছে প্রায় ৩৬০ একর বা ১৪৫৬০০০ ব.মি যার ১/৩ অংশ সোলার প্যানেল আচ্ছাদন করে দৈনিক প্রায় ২৫০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব । পাহাড়তলীসহ রেলওয়ের হর্স – সো ট্যাংক বা জোড় ডেবা ( দিঘী ) আচ্ছাদন করে দৈনিক সৌর বিদুৎ পাওয়া যাবে প্রায় ৫০ মেগা ওয়াট । অনুরূপ রেলওয়ের পতিত ভূমি রয়েছে মেঘনা রেল ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় , শান্তাহার জংশান এলাকায় , সৈয়দ পুর , হার্ডিঞ্জ ব্রীজ এলাকায় , খুলনা সহ আরও বহু স্থানে । টেকসই জ্বালানি – উৎস হিসাবে রৌদ্রদীপ্ত রেলওয়ে ওয়ার্কসপ সমূহের রূপসেড ব্যবহার করা যেতে পারে খুব সহজে । নিজস্ব উৎস হতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হলে বর্তমান জ্বালানি ব্যয়ের হিসাবে রেলওয়ের প্রতিবছর সাশ্রয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা । বাংলাদেশ রেলওয়ের চলমান ও প্রস্তাবিত প্রকল্পসমূহ যদি কার্বন নিঃসরণমুক্ত রেল পরিচালনার আওতায় আনা না যায় তবে এইসমস্ত প্রকল্পগুলোর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পূর্ণ করার পূর্বেই কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । কারণ কার্বন নিঃসরণমুক্ত পৃথিবী গড়তে বিশ্ব নেতৃত্বের অঙ্গিকার ( COP 26 ) বাস্তবায়ন হতে হলে রেলওয়ের হাজার হাজার টনের খনিজ জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না । তাই প্রস্তাবিত ডাবললাইন , ইলেকট্রিক ট্র্যাকশান এবং নতুন রেললাইনের পরিকল্পনা গ্রহণে অবশ্যই টেকসই জ্বালানি – উৎস বিষয়ে চিন্তা করতে হবে এবং বিষয়টি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে । নতুন রেল কোচ ও লোকমোটিভ ক্রয়ের ক্ষেত্রেও শূন্য কার্বন নিঃসরণ সিস্টেম সম্বলিত কোচ ও ইঞ্জিনের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে । এক্ষেত্রে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ড হতে প্রকল্প সহায়তা পাওয়া যেতে পারে ।
বর্তমানে রেলওয়ের শ্রমিক কর্মচারীগণ লোকসানি প্রতিষ্ঠানের অপবাদে সন্তাদের শিক্ষা , চিকিৎসা , ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ হতে প্রায় বঞ্চিত । সৌরবিদ্যুতায়নের মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে সাশ্রয়ী অর্থের একটা অংশ রেল কর্মচারীদের কল্যাণে ব্যবহার করা সম্ভব এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেলওয়ে তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে ।
লেখক :
উর্ধ্বতন উপ- সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা উন্নয়ন) পূর্ব
এমএসসি ইন ডিইই , চুয়েট ।
প্রকৌশল বিভাগ , চট্টগ্রাম ।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article