সেলিমুর রহমান :
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত অস্থায়ী (TLR) শ্রমিক ও কর্মচারীরা টানা তিন মাস ধরে বেতন/মজুরি না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও হতাশায় ভুগছেন। দীর্ঘদিন ধরে সামান্য বেতনে দায়িত্ব পালন করে রেলওয়ের চাকা সচল রাখলেও বর্তমানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, পাকশী, লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগে প্রায় কয়েক হাজার টিএলআর শ্রমিক গেইট কিপার (ট্রাফিক, ইঞ্জিনিয়ারিং), পোর্টার, খালাসী (ওয়ার্কস, ইলেক্ট্রিক্যাল), ওয়েম্যান, রেস্ট হাউস বেয়ারা, পিম্যান, অফিস সহকারী ইত্যাদি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অনেকেই ৬ থেকে ১৬ বছর ধরে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত থেকে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।তাদের অভিযোগ, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতি মাসে ১০ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। গত তিন মাস ধরে কোনো বেতন না পেয়ে অনেক শ্রমিক পরিবার নিয়ে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
একজন ক্ষুব্ধ টিএলআর শ্রমিক বলেন,
“আমরা দিনের পর দিন পানি খেয়ে ডিউটি করি, কিন্তু ট্রেন যেন চালু থাকে—এই লক্ষ্যেই কাজ করে যাই। অথচ তিন মাস ধরে বেতন নেই। এখন সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে গেছে।”অস্থায়ী শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১ আগস্ট ২০২৫ এবং ৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে তারা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। তাতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে অচিরেই বেতন পরিশোধ করা হবে। এমনকি ৫ অক্টোবর তারিখে মাননীয় সচিব ও মহাপরিচালক মহোদয়ও শ্রমিকদের দ্রুত বেতন প্রদানের আশ্বাস দেন। কিন্তু ১৬ অক্টোবর পর্যন্তও বেতন পরিশোধের কোনো অগ্রগতি হয়নি।
শ্রমিকরা দাবি করছেন, বাজেট থাকা সত্ত্বেও স্যানশন (অনুমোদন) না থাকায় বেতন আটকে আছে বলে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন। বিষয়টি তারা “হতাশাজনক ও দুঃখজনক” বলে অভিহিত করেছেন।এ অবস্থায় রেলওয়ের অস্থায়ী (TLR) শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, যদি আগামী ২০ অক্টোবর ২০২৫ সোমবারের মধ্যে বকেয়া তিন মাসের বেতন এবং নিয়মিত বেতন প্রতি মাসের ১০ তারিখে পরিশোধের সুনির্দিষ্ট নিশ্চয়তা না দেওয়া হয়, তবে ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে।
তারা আরও সতর্ক করে বলেন,
“লেভেল ক্রসিং, স্টেশনসহ ট্রেন পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটলে তার দায়ভার কোনো টিএলআর কর্মচারীর নয়, বরং পুরোপুরি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।”
শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ না হওয়ায় পরিবার নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। কেউ কেউ ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন। অথচ তারাই প্রতিদিন রেলওয়ের নিরাপত্তা ও ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করতে প্রাণপণ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।রেলওয়ের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “বেতন প্রদানের জন্য প্রক্রিয়া চলছে। অর্থ ছাড়ের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।”
তবে শ্রমিকদের বক্তব্য, এই ধরনের আশ্বাস তারা বহুবার শুনেছেন। এখন তারা বাস্তব ফলাফল চান—অর্থাৎ বকেয়া বেতন হাতে পাওয়ার নিশ্চয়তা।
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে কর্মরত শ্রমিকরা মনে করছেন, যদি দ্রুত তাদের সমস্যা সমাধান না হয়, তবে রেলওয়ে পরিচালনায় বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে।