Wednesday, October 22, 2025

নিরাপদ ও সাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে মানুষের প্রথম পছন্দ। পছন্দের তালিকায় রেলওয়ে হলেও ট্রেনের টিকেট মিলছেনা সহজেই।

Must read

মোহাম্মদ হোসেন :

চাহিদার তুলনায় ট্রেন সংখ্যা কম হওয়ায় যাত্রী পরিবহনে হিমসিম খাচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই সেবা মূলক প্রতিষ্ঠানটি। তারপরও রেলওয়ে চেস্টা করে যাচ্ছে যাত্রী সেবার ও নিজেদের সুনাম ধরে রাখতে।
রেলওয়ে যাত্রীসহ সাধারণ মানুষের একটি বড় প্রশ্ন রেলওয়ে টিকেট পাওয়া যায়না বরং কালোবাজারীতেই মিলছে হরহামেশা। বহু অভিনব পদ্ধতি, আইন, কঠোর নিয়ম করেও রেলওয়ে টিকেট কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণে আনতেই পারছে না। রেলওয়ে একধাপ আগালে টিকেট কালোবাজারি আগায় আরেক ধাপ। তারা একটা নয় একটা উপায় বের করেই থাকে।
টিকেট কালোবাজারির পাশাপাশি যাত্রীরা টিকেট কম পাওয়ার আরও একটি বড় কারন রেলওয়ে সহজ.কম সার্ভারে আসন সংরক্ষণ (ব্লক), কার্ড পাশে ২% বরাদ্দ সহ অভিনব পন্থায় বেপোরোয়া টিকেট সরবরাহ।
১। ওপেনিং তারিখে অনলাইন/অফলাইন টিকেট উন্মুক্ত হচ্ছে। টিকেট ওপেন ওয়ার ১০ সেকেন্ড সকল টিকেট গায়েব কেউ হয়তো পাচ্ছে, কেউ লোডিং,কেউ সার্ভারে ঢুকতেই পারছেনা। টিকেট গেলো কোথায়?
ওপেনিং স্টেশনে টিকেট ওপেন হওয়ার সাথে সাথে কাউন্টার সমূহে ৪/৫ টি উইন্ডোজ ওপেন করা থাকে। প্রতিটি উইন্ডোজে ৪ টি করে টিকেট ট্যাপ করে রাখা হয়। এগুলো সবই ৩ মিনিটের জন্য অটো ব্লক হয়ে যায়। এবার নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম্বারের ওটিপি দিয়ে টিকেট গুলো প্রিন্ট হয় তিন মিনিটের মধ্যে। এভাবেই পুরো একটি ট্রেন কেনো বহু ট্রেনের টিকেট নিমিষেই শেষ হয়। মোবাইলে লর চাইতে স্টেশন কম্পিউটারে টিকেট সিলেক্ট ও কাটতে খুবই সহজ। এই প্রক্রিয়ারলয় সহজ.কমের কিছু ব্যক্তি ও একটি চক্র। এই স্থানে কোন তদারকি নেই। হয়তো আমি প্রকাশের আগে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানেননা বিষয়টি।
সমাধানের জন্য উচিৎ জবাবদিহিতা, কোন অবস্থাতেই একাধিক উইন্ডোজ অপেন করে রাখা যাবে না। করতে হবে দায়িত্বরতের তদারকি।
২। রেলওয়ে কর্মচারীরা পিভিলেস পাসে ওপেনিং তারিখেই টিকেট কাটেন নিয়ম অনুসারে। অথচ নির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তার বাই নেম ২% টিকেট সংরক্ষণের পরও ওপেনিং তারিখে কার্ড পাশে কাউন্টার হতে টিকেট ইস্যু হয়। এসকল টিকেটের তদারকি কি?
সচ্ছতার জন্য এসব অনিয়ম বন্ধ করা প্রয়োজন। ২% সংরক্ষণ হলে একই কার্ড পাসে ওপেনিং তারিখে টিকেট ইস্যু করা যাবেনা।
৩। নির্দিষ্ট রিকুইজিশন অনুযায়ী বিভাগীয় বানিজ্যিক কর্মকর্তার নির্দেশে সহজের সার্ভারে স্টেশনগুলোয় বিভিন্ন ট্রেনে ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যের আসন সংরক্ষণ (ব্লক) করা হয়। সংরক্ষিত আসন বাই নামের ফোনে কনফার্ম মেসেজ যায়। তিনিই যাচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত করা হচ্ছে তো?
যাত্রার ১২ ঘন্টা পূর্বে টিকেট ওপেন করে দেওয়া হয়। সেই ওপেনিংএর সময় কর্মকর্তাগন যদি সহজ.কম সার্ভার রুমে অবস্থান করেন এবং ওপেনিংএর পূর্বের এক ঘন্টার কোন নাম্বারে টিকেট বরাদ্দ হয়েছিল কিনা প্রতিদিন অনুসন্ধান করা হয় তাহলে টিকেট কালোবাজারি রোধ করা সম্ভব অনেকটা।
৪। ভিভিআইপি,বিচারপতি সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে রেলওয়ে ট্রেনের কেবিন সংরক্ষণ করা হয়। আদোও প্রতিদিন তারা যাচ্ছেন তো? যথাযথ রিকুইজিশন আবেদনের প্রেক্ষিতে আসন সংরক্ষণ হচ্ছে তো। স্টেশন মাস্টার হয়ে রিজার্ভেশন পর্যন্ত আবেদন কপি/চিঠি জমা দেওয়া হয়তো?সঠিক তদারকি প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে।
নিয়মিত মনিটরিং, পর্যবেক্ষণই পারে রেলওয়ে টিকেটিং সেক্টরে সচ্ছতা আনতে। কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক সহজ.কম সার্ভার অবজারভেশন সহ ওপেনিং টাইমে কর্মকর্তার উপস্থিতি তদারকি টিকেট কালোবাজারি রোধে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করছি।

রেলওয়ে মনিটরিং সেলঃ
একই এনআইডি ও মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে প্রতিদিন টিকেট কাটা হচ্ছে। রেলওয়ে মনিটরিং সেল আদৌও কি করছে? কয়টি নাম্বার রেলওয়ে ব্লক করেছে!
সঠিক জবাবদিহিতা না থাকায় ও রেলওয়ে মনিটরিং সেলের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে টিকেট কালোবাজারিরা।
ফাইন্ডআউট করুন কতগুলো এনআইডি প্রতিদিন টিকেট ক্রয় করছে। মাসিক কতো টাকার টিকেট। মাসে যদি একটি এনআইডি দিয়ে ২০,০০০ টাকার উপরে টিকেট ক্রয় করে সেগুলো ব্লক করুন এবং তালিকা করে রেলভবন হতে এনবিআরের কাছে তা হস্তান্তর করুন। কারন এই এনআইডির ব্যক্তিদের কর দেওয়া বাধ্যতামূলক। এনবিআর তা যাচাই-বাছাই করবে। এভাবেই দেখা যাবে কয়েক শতাংশ কালোবাজারি রোধ হবে।
সহজ.কমের সার্ভার অনুসন্ধান করুন রেলভবনে প্রতিনিয়ত। টিকেটিং সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রেলভবন থেকে স্টেশন সার্ভার পর্যন্ত সঠিক মনিটরিং করলে এবং টিকেট যার ভ্রমণ তার নিশ্চিত করলে টিকেট কালোবাজারি রোধ হবে। এক সপ্তাহে ব্যপক হারে চেকিং ও জরিমানা করলে চলবে না। অভিযান ব্লক চেকিং কার্যক্রম প্রতিনিয়ত চলমান রাখতে হবে। এতে যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে। মনিটরিং সেল যদি থাকে তারা সঠিকভাবে মনিটরিং করছে কিনা। নাকি আদৌও মনিটরিং সেল আছে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন!
নিশ্চয়ই একদিন বাংলাদেশ রেলওয়ে সচ্ছতা ফিরে আসবে। সাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করবেন যাত্রীরা। থাকবে না টিকেট কালোবাজারি এমন রেলওয়েই দেখতে চাই আমরা।

মোহাম্মদ হোসেন
রেল ফ্যান

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article