মো: ইসমাইল আলী:
গত কয়েকদিন ধরে মেট্রোরেল নিয়ে সাধারণ মানুষ ও মিডিয়ার কনসার্ন বেশি, যার পিছনে ভেলিড কারণও আছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটা চক্র মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনাকারি সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এমডির পেছনে লেগেছে।
তাদের অভিযোগ, ডিএমটিসিএলের এমডি জাইকা তথা জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট করছেন। কারণ জাপানি কোম্পানিকে তিনি ঢাকায় প্রস্তাবিত আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দিতে রাজি না। এটা নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক দেখলাম অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও করে ফেলেছেন।
আসলে সেগুলো কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন না। বরং সেই চক্রটা বিভিন্ন সাংবাদিকদের মেট্রোরেল কোম্পানির বিরুদ্ধে নিউজটা খাওয়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন জনকে তারা টাকাও অফার করছে। কিছু ভোগাস তথ্য ও সে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দিচ্ছে তারা। রিপোর্টারদের কোন কষ্টই করতে হবে না। ফাউয়ের ওপর টু-পাইস ইনকামও হয়ে যাবে সে নিউজ করলে।
এবার বলি আসল ঘটনা। জাইকার ফান্ডে দুইটা মেট্রোরেল নির্মাণের প্রজেক্ট চলছে। এগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু জাইকার ফান্ডের সাথে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। সে শর্ত পুরোপুরি পালন করতে গেলে জাপানি কোম্পানি ছাড়া কাজ পাবে না। আর জাপানি কোম্পানিগুলো যে রেট প্রস্তাব করেছে তাতে মেট্রোরেল দুইটার নির্মাণব্যয় ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এ নিয়ে জাইকার ঢাকা অফিসের সঙ্গে ডিএমটিসিএলের টানাপোড়েন চলছে। এজন্য ডিএমটিসিএলের এমডির বিরুদ্ধে লেগেছে ওই চক্র। তাদের অভিযোগ ডিএমটিসিএলের এমডি অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্টধারী, যা বাংলাদেশের সরকারি চাকরি নীতিমালার লঙ্ঘন। এ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে ফেলেছেন কয়েকজন।
অথচ তারা জানেন না যে, মেট্রোরেলের এমডি নিয়োগের নীতিমালায় বলা হয়েছে এমডি বিদেশি নাগরিক হতে পারবেন। শুধু তাই নয় মেট্রোরেল কোম্পানির এমডির যোগ্যতায় বলা হয়েছে, এই সেক্টরে ২০ বছরে কাজের অভিজ্ঞতা। এটা বাংলাদেশি কোন নাগরিকের পক্ষে থাকা সম্ভব না।
মেট্রোরেলের এমডির বিরুদ্ধে আরেকটা অভিযোগ তার ২০১৭ সালে ভারতের আধার কার্ড করা হয়েছিল। সেটার কপিও সেই চক্র দিয়েছে। মেট্রোরেলের এমডি ভারতের মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট এক কোম্পানিতে কাজ করেছেন লম্বা সময়। আর ভারতে বৈধভাবে কাজ করার শর্ত হলো এক বছরের বেশি সময় কাজ করতে হলে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে অবশ্যই আধার কার্ড লাগবে।
মেট্রোরেল নির্মাণে চীনের কোম্পানি কাজ পেলে যে ব্যয় হবে জাপানের কোম্পানিকে কাজ দিলে তার দ্বিগুণ ব্যয় হবে। মূলত এ নিয়ে জাইকার আপত্তি। এজন্য জাইকার পক্ষে একটা চক্র দেশের সাংবাদিকদের কনভেন্স করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। আমার কাছেও সেসব কাগজপত্র এসেছিল, যেগুলো দেখে ওয়েস্ট বিনে ফেলেছি।
মেট্রোরেল নিয়ে জাইকার বাটপারির আরও অনেক ঘটনা জানা আছে। আগামীতে সেগুলো নিয়ে লিখবো ইনশাআল্লাহ। তবে আপাতত এটুকুই বলছি, যারা মনে করছেন জাইকা মানে ধোঁয়া তুলসী পাতা আর বাংলাদেশিরা খারাপ তাদের বলবো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার আগে একটু খোঁজখবর নিয়ে দেখেন আসলে হচ্ছে কি?

