বিশেষ প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগা প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে সাবেক দুই মহাপরিচালক (ডিজি) ও এক সাবেক প্রকল্প পরিচালককে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী ১০ নভেম্বর পৃথক সময়ে তিন কর্মকর্তাকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের সূত্র জানায়, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে “কালুখালী–ভাটিয়াপাড়াঘাট সেকশন এবং কাশিয়ানি–গোপালগঞ্জ–টুঙ্গিপাড়া নতুন রেলপথ নির্মাণ (২য় সংশোধিত)” প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ব্যাপক অনিয়ম, ভুয়া এলসি খোলা, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে।তদন্তে যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন—
সাবেক মহাপরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন,সাবেক মহাপরিচালক কাজী মোঃ রফিকুল আলম, এবং সাবেক প্রকল্প পরিচালক মোঃ মোজাম্মেল হক।
দুদকের নোটিশ অনুযায়ী, সাবেক ডিজি আমজাদ হোসেনকে আগামী ১০ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে, ডিজি কাজী মো. রফিকুল আলমকে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে, এবং প্রকল্প পরিচালক মোজাম্মেল হককে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে দুদকের কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে হবে।
দুদকের চার সদস্যের অনুসন্ধান টিমের নেতৃত্বে আছেন সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান। সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী পরিচালক আল-আমিন ও উপসহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার।
সূত্র জানায়, তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নামে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসব প্রকল্পে প্রভাব খাটিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে বাজেট ফুলিয়ে তোলা, এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
দুদক কর্মকর্তাদের মতে, সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বক্তব্য গ্রহণের পর অনুসন্ধান নতুন পর্যায়ে পৌঁছাবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় ও দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ বছরে তমা ও ম্যাক্স গ্রুপ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রেলের অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পেয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে, কাজের মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে।সবচেয়ে আলোচিত দোহাজারী–রামু–কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১,৮৩৪ কোটি টাকা, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকায়। একইভাবে আখাউড়া–লাকসাম ও ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ ডুয়েল রেলপথেও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা মনে করছেন, এবারকার তদন্তে প্রভাবশালী ঠিকাদার গোষ্ঠী ও সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভূমিকা উন্মোচিত হতে পারে।

