নবনির্মিত খুলনা-মোংলা রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেন চলা শুরু হয়নি এক বছরেও। বিপুল অংকের টাকা খরচ করে তৈরি এ রেলপথ দিয়ে মোংলা বন্দরে আমদানি করা পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কম খরচে পরিবহনের সুযোগ না মেলায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পণ্য পরিবহন সহজ ও মোংলা বন্দরকে আরও গতিশীল করতে ২০১০ সালে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। চার দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে এ রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালে। ৯১ কিলোমিটারের এই রেলপথে ৯টি প্ল্যাটফর্ম, রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেলসেতুসহ ১০৭টি ছোট সেতু ও ৯টি আন্ডারপাস রয়েছে। যেখানে খরচ হয়েছে চার হাজার ২৬১ কোটি টাকা।
বিপুল অর্থ বিনিয়োগে গড়ে তোলা ওই রেলপথ উদ্বোধনের পর চলতি বছর মাঝামাঝি থেকে একটি মাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন বেনাপোল থেকে মোংলা যাতায়াত করে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরে এক বছরেও চালু হয়নি এ পথে পণ্যবাহী ট্রেন। ফলে মোংলা বন্দর থেকে পণ্য আমদানি বা রফতানির ক্ষেত্রে কম খরচে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া হচ্ছে না ব্যবসায়ীদের। বন্দর, রেলওয়েসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের সমন্বিত উদ্যোগ না থাকায় অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও তা কাজে লাগছে না বলে অভিযোগ তাদের।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এস মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ রেলপথ করাই হচ্ছে পণ্যবাহী রেল চালানোর জন্য। অথচ চলছে মাত্র একটা যাত্রীবাহী ট্রেন। মোংলা বন্দরকে আরও গতিশীল করতে এবং ব্যবসায়ীদের আরও বেশি এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী করতে এ পথে পণ্যবাহী রেল চালানো খুবই জরুরি। তবে এটা কারও একার পক্ষে বা একটা সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবগুলো দফতরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যেমন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী সংগঠন, পণ্যের মালিক, যার হাতে পণ্য পৌঁছাবে সবাইকে এক ছাতার নিচে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু এই কাজটি তারা করছে না। ফলে ব্যবসায়ীদের কম খরচে পণ্য পরিবহনের সুযোগ হচ্ছে না।’
মোংলা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক খন্দকার মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় রয়েছি নতুন এই রেলপথ দিয়ে কম খরচে পণ্য পরিবহন করবো। তবে আমাদের অপেক্ষার আর শেষ হচ্ছে না। তাহলে এত টাকা খরচ করে এই প্রকল্প করে কি লাভ হলো? শুধু যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস দিয়ে এই রেলপথের আসল কাজই তো হবে না।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে যত দেরি হবে ততই কিন্তু প্রকল্পের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন কমে আসবে। এই প্রকল্প কিন্তু ঋণের টাকায় করা। আমাদের তো বছর বছর ঋণ দিয়েই যেতে হচ্ছে, তাহলে আমরা কেন অর্থনীতিতে পিছিয়ে থাকবো? আমার সবকিছুই রেডি, কিন্তু তা কোনো কাজে আসছে না। এ রেলপথ দিয়ে পণ্য পরিবহণ শুরু হলে মোংলা বন্দরও গতিশীল হবে, আমদানি-রফতানি বাড়বে। আর তাতে এ অঞ্চল থেকে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দারও উন্মোচন হবে।
এ বিষয়ে খুলনা মোংলা রেলপথ প্রকল্প পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘একটা নতুন রেললাইনে ট্রেন চালাতে গেলে অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে সমাধান করা প্রয়োজন। আমাদেরও কিছু বিষয় সমন্বয় করতে হয়। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে পলিসি লেভেলে কাজ করছি। সবার সঙ্গেই আমাদের কথা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই আমরা এ পথে রেল চালাতে পারবো।’
বৈদেশিক ঋণ সহায়তায় নির্মিত এ রেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে দুই বিদেশি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।