দায়িত্ব পালনকালে একাই ৯০ হাজার ৮৯১ কোটি টাকার ৪৫টি প্রকল্প অনুমোদন করিয়েছেন সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। মুজিবুল হক রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ৮ বছর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আর গত ১৫ বছরে রেলে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এর প্রায় ৮৫ শতাংশ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হয়েছে মুজিবুল হকের সময়।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাহিদা অনুযায়ী মুজিবুল হকের দায়িত্বকালে নেয়া প্রকল্পগুলোর সংখ্যা, প্রকল্প ব্যয় ও প্রকল্প পরিচালকদের তথ্য-উপাত্তের তালিকা তৈরি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তিনি ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ঐ সময়ের মধ্যে ৪৫টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। যার মোট ব্যয় প্রায় ৯০ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। ওই সময়ের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী চলমান রেলপথ, রেলওয়ে ব্রিজ ও ইঞ্জিন-কোচ ক্রয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। মুজিবুলের নজর ছিল নতুন রেলপথ, রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের দিকে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন রেলপথ, স্টেশন নির্মাণসহ জোড়াতালি দিয়ে ট্রেন উদ্বোধন এবং যত্রতত্র স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের বিরতি দিয়েছেন। রেলভবনে মুজিবুলের কক্ষ ও তার সরকারি বাসভবন ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তি, দলীয় ঠিকাদার এবং রেলওয়ের ক্ষমতাধর পিডির দখলে।
মুজিবুলের নজর ছিল নতুন রেলপথ, রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের দিকে। রেলভবনে মুজিবুলের কক্ষ ও তার সরকারি বাসভবন ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তি, দলীয় ঠিকাদার এবং রেলওয়ের ক্ষমতাধর পিডির দখলে।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রতিটি প্রকল্প থেকে ৩৫ শতাংশ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রকল্প পরিচালক দ্বারা অধিকাংশ প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে লুটপাট করেছেন। লুটপাটের বড় অঙ্কের ভাগ পেতেন সংশ্লিষ্ট পিডিরা। আবার মুজিবুল কিংবা পিডির লুটপাট অংশের বড় অংশ পেতেন শীর্ষ পর্যায়ের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা।
পরিকল্পনা দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, মুজিবুল হক তার দলীয় এমপি, মন্ত্রী এবং ঠিকাদারদের অনুকূলে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সব সময় সংশ্লিষ্টদের চাপে রাখতেন। আওয়ামীপন্থি পিডিদের হাতে রেখে একেকজনকে ৭ থেকে ১০টি প্রকল্পের দায়িত্ব দিতেন। সম্প্রতি বারবার দুদক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উন্নয়নের নামে তার (মুজিবুল) দুর্নীতির ফিরিস্তির তালিকা করা হয়েছে। বেরিয়ে আসছে তার সঙ্গি পিডিসহ সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র।
জানা গেছে, মুজিবুল হকের দায়িত্ব পালনকালে ৪৫টি প্রকল্পের অনুমোদন হয়। এসব প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসহ প্রকল্পের শুরুর ব্যয় এবং ওই প্রকল্পে পরবর্তীতে সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে কত টাকা করা হয়েছে- সবই থাকছে তালিকায়। ইতোমধ্যে মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন-অর্থ পাচারের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মুজিবুল হক তার দলীয় এমপি, মন্ত্রী এবং ঠিকাদারদের অনুকূলে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সব সময় সংশ্লিষ্টদের চাপে রাখতেন। আওয়ামীপন্থি পিডিদের হাতে রেখে একেকজনকে ৭ থেকে ১০টি প্রকল্পের দায়িত্ব দিতেন।
৪৫টি প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৯১ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্প শুরুতে মোট ব্যয় ধরা হয় ৬৭ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে শুধু লুটপাটের জন্য প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় প্রায় ৯১ হাজার কোটি টাকা। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও দুদক এসবের খোঁজ নিচ্ছে। এতে তার নিজের নামে, স্ত্রী-স্বজনদের নামে একাধিক ফ্ল্যাট-প্লটের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। রেলে প্রায় ৮ বছর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট-আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পরিকল্পনা দফতর সূত্রে জানা গেছে, রেলে উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ বাকি ৫ মন্ত্রী-সচিব, পিডিদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট ছিল। নিজেদের পছন্দের ঠিকাদার এবং আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করাতেন। দুর্নীতিবাজ সাবেক মন্ত্রী, সচিব, পিডিসহ বেশ কয়েকজন সাবেক রেলওয়ে মহাপরিচালকের আমলনামাও প্রস্তুত।
উন্নয়ন ঘিরে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বরত উপদেষ্টা-সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা রেলের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। রেলে উন্নয়নের নামে যে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়সহ দুদক থেকে যেসব তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে, আমরা তা প্রদান করছি।
মুজিবুল হকের নিজের নামে, স্ত্রী-স্বজনদের নামে একাধিক ফ্ল্যাট-প্লটের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। রেলে প্রায় ৮ বছর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট-আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সুত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ