দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ের ডিজেলচালিত রেল ইঞ্জিনের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা (কেলোকা) দেশে রেল যোগাযোগব্যবস্থা সচল রাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। অথচ এ কারখানা জনবলসংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। প্রতি বছরই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসরে যাওয়ায় জনবলসংকট বেড়েই চলেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় যান্ত্রিক, নিরাপত্তা, বৈদ্যুতিক, স্বাস্থ্য, স্টোরসহ ১১টি বিভাগে প্রয়োজনীয় জনবলের এক তৃতীয়াংশ এখন কর্মরত আছেন। কারখানায় ৭২৪ পদের বিপরীতে মাত্র ২১৩ জন কর্মরত আছেন। গত বছরেও এ কারখানা থেকে অর্ধ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে গেছেন। সেকশনে ২৯ শতাংশ পদ শূন্য রয়েছে। রেল ইঞ্জিন কারখানার অত্যাধুনিক মেকানিক্যাল সেকশন ৫৫৯টি পদের বিপরীতে এক সময় কর্মরত ছিল প্রায় সাড়ে ৪০০ শ্রমিক-কর্মচারী। কেউ পদোন্নতি পেয়ে ওপরের গ্রেডে চলে গেছেন। গত ১৫-২০ বছরে অবসরে যেতে যেতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৫১ জন।
দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এ কারখানায় জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় জনবলসংকট তীব্র হচ্ছে। খালাসি পদে বরাদ্দ রয়েছে ৫০ জন। কারখানায় নিয়োগ করা খালাসি দেওয়া হয়েছে ৪৮ জন। ১২৪ জন আউট সোর্সিং ও অস্থায়ী শ্রমিক (টিএলআর) জনবল দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। ২০১৩ সালে মেকানিক্যাল সেকশনে খালাসি (চতুর্থ শ্রেণি) পদে কিছু জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। কারখানার সূত্র জানায়, রেল ইঞ্জিনের স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর। আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া প্রতিটি লোকোমোটিভকে (রেল ইঞ্জিন) পাঁচ বছর পরপর জেনারেল ওভারহোলিংয়ে (জিওএইচ) জন্য পার্বতীপুরে কেলোকায় আনা হয়। এ কারখানায় লোকোমোটিভ জিওএইচ করে কার্যক্ষম করে তোলা হয়। একটি রেল ইঞ্জিনে ৩৪ হাজারের বেশি যন্ত্রাংশ রয়েছে। জেনারেল ওভারহোলিংয়ে প্রতিটি ক্রটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করে নতুন যন্ত্রাংশ সংযোজন ও অকেজো অংশ মেরামত করা হয়।
পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার প্রধান নির্বাহী (সিইএক্স) প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতি মাসে এক-দুজন করে অবসরে যাচ্ছেন। রেলওয়ে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানাকে সক্রিয় করতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগসহ খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও অর্থ বরাদ্দ পেলে প্রতি মাসে তিনটি আউটটার্ন দেওয়া সম্ভব। উল্লেখ্য, ডিজেলচালিত রেল ইঞ্জিনের জিওএইচ করে কার্যক্ষম করার লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে সৌদি অর্থায়নে ২০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ১১১ একর জমির ওপর বাংলাদেশ রেলওয়ের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা স্থাপন করা হয়।