Sunday, April 20, 2025

দিনে চড়বে সাড়ে পাঁচ লাখ যাত্রী

Must read

দেশের সবচেয়ে জনবহুল শহরে যোগাযোগ খাতে মেট্রোরেল এনে দিয়েছে স্বাচ্ছন্ন। মেট্রোরেল প্রতিদিনের যাতায়াতের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে লাখ লাখ যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে সেবা দিয়ে চলেছে। অল্প সময়েই নগরবাসীর মন জয় করে নিয়েছে গণপরিবহন সার্ভিসটি। এটি চালু হওয়ার পর এই পথে সড়কের উপর উল্লেখ যোগ্যভাবে চাপ কমেছে। বর্তমান এই রুটে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। যানজট আমাদের অর্থনীতির গতি অনেকটাই আটকে রেখেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকা মানুষের মনের ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে, উদ্যম কমিয়ে দেয়। পরোক্ষভাবে এই হতোদ্যম জনশক্তিও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সেই পরিস্থিতি থেকে স্বস্তি দিয়েছে মেট্রোরেল।

নিয়মিত যাত্রীদের কাছে মেট্রোরেল যেন একটি আশির্বাদ। মেট্রোরেল চালুর আগে এই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ ছিলো না। যানজটে আটকে থেকে একই স্থানে বসে থাকতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মেট্রোরেলে ঢাকাবাসীর সফলতা আসায় সরকার পরিকল্পনা অনুযায়ী যানজট নিরসনে মেট্রোরেলকে ঢাকার বিভিন্ন রুটে ছড়িয়ে দিতে কাজ শুরু করেছে। এই পরিকল্পনায় যানজটে স্থবির হয়ে থাকা পুরান ঢাকাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পুরান ঢাকার মতো জনবহুল এবং ঐতিহাসিক এলাকার মানুষ মেট্রোরেলের সুবিধা থেকে এতদিন বঞ্চিত ছিল। এমআরটি লাইন-২ এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পুরান ঢাকা মেট্রোরেলের সঙ্গে যুক্ত হবে, যা এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সহজ করবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন গতি আনবে।

মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ দ্রæত গতিতে চলছে। মতিঝিলের শাপলা চত্বর হয়ে দক্ষিণ কমলাপুর দিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার অংশের নির্মাণকাজ চলছে।
এছাড়াও আগামী মে মাস থেকে শুক্রবার সকাল থেকেই মেট্রোরেল চালানোর চিন্তা করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এখন শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে অর্থাৎ ছুটির দিন হিসেবে অর্ধবেলা চলাচল করছে মেট্রোরেল। মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে দৈনিক যাত্রী চলাচল সাড়ে পাঁচ লাখ হবে। এ কথা জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুর রউফ। ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, মেট্রোরেলের ফ্রিকোয়েন্সি মে মাসের মধ্যে সহনীয় মাত্রায় আনার জন্য আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে উপদেষ্টার নির্দেশনা রয়েছে। মে মাসকে আমরা টার্গেট করেছি। আশা করছি মে মাসের মধ্যে গুছিয়ে ফেলতে পারবো। রাত ১০টা পর্যন্ত চালানোর ব্যাপারে প্রচÐ চাপ রয়েছে। আর মেট্রোরেলের পিলারে গ্রাফিতি গ্রহণযোগ্য। গ্রাফিতি আমাদের উদ্বুদ্ধ করছে। কিন্তু এখন অনেক পোস্টার লাগানো হচ্ছে। ঢাকা শহরের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সিটি করপোরেশন ও পুলিশকে চিঠি দিয়েছি। আমাদের অ্যাকশন আমরা নেব।

মেট্রোরেল প্রকল্পের ঋণের কিস্তি ও সুদ তিন কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। এ খাতের প্রায় ৭৬ কোটি টাকা মেট্রোরেলের আয় থেকে পরিশোধ করা হয়েছে। গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০এর স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাথমিকভাবে অন্য স্টেশন ও স্থাপনা থেকে কিছু যন্ত্রপাতি স্থানান্তর এবং স্থানীয়ভাবে কিছু পণ্য কিনে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় করে দুটি স্টেশন চালু করা হয়। অন্য স্থান থেকে যেসব যন্ত্র ও সামগ্রী নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর আরও কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এ কাজে সাকল্য ১৮ কোটি টাকা লাগবে। অবশ্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বলা হয়েছিল, মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত দুই স্টেশন চালু করতে এক বছর লাগবে। ব্যয় হতে পারে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা।
দৈনিক ট্রেন চলাচলের সংখ্যা বাড়বে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মেট্রোরেলের টিকিট বিক্রি করে আয় হয়েছে প্রায় ২৪৪ কোটি টাকা। অন্যান্য দিন ব্যস্ত সময়ে পিক আওয়ারে ৮ মিনিট এবং কম ব্যস্ত সময়ে (অফ পিক আওয়ারে) ১০ মিনিট পরপর উভয় দিক থেকে মেট্রোরেল চলছে। সব মিলিয়ে খোলার দিনগুলোতে সারা দিনে ১৯৮ বার যাতায়াত করে মেট্রোরেল। শুক্রবার চলে ৬০ বার। বর্তমানে মেট্রোরেলে গড়ে সাড়ে তিন লাখ যাত্রী পরিবহন করে বলে জানান তিনি। মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে দৈনিক যাত্রী চলাচল সাড়ে পাঁচ লাখ হবে বলে জানান ডিএমটিসিএলের এমডি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. শামসুল হক বলেন, রাজধানীর বিকেন্দ্রীকরণ, ছোট শহর ও পল্লী এলাকায় থাকতে লোকজনকে উৎসাহ দিতে মেট্রোরেলের মতো প্রকল্প নেয়া উচিত। পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ছোট বিনিয়োগের মাধ্যমেই রাজধানীর যানজট নিরসনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article