নীলফামারী: হস্তান্তরের আগেই নীলফামারীর চিলাহাটি রেলস্টেশনের নবনির্মিত আইকনিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার সংস্কার করতে দেখা গেছে।অবশেষে টাইলস পরিবর্তন করে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় রুবাইয়াত হোসেন, ইসমাইল ও সুমনসহ অনেকে জানান, নিম্নমানের কাজ করায় আইকনিক ভবন ও ওয়াশফিটের পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের রড দিয়ে রাতের আঁধারে ঢালায়ের কাজ চালিয়েছে। রেলওয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে গেছেন বিষয়টি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইঞ্জিন দাঁড়ানোর কারণে ভবনের একটি জায়গায় ফাটল ধরতে পারে। অত্যাধুনিক ব্যয়বহুল এ ভবনের কাজে শুরু থেকে কোনো সিটিজেন চাট না দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছা মতো করে গেছে। রেলওয়ের পক্ষে তদারকির জন্য পাকশী ডিভিশনের প্রকৌশলী-২ আব্দুর রহিমকে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোনো তাগিদ দেননি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের প্রকল্প পরিচালক নাজমুল হোসেন রকি এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
স্থানীয়রা আইকনিক ভবনের ফাটল চিত্র রেলওয়ের প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিম ও আইডব্লিউ শরিফুল আজিমকে জানিয়েছেন। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাটলের জায়গায় উন্নত মানের আঠা দিয়ে বন্ধ করে রং লাগিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। কয়েকদিন পর ওই ফাটলের চিহ্ন আবার দেখা দেয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাটলের জায়গার টাইলস খুলে ফেলে এবং মেশিন দিয়ে পুটিং করে। পুটিং শেষে আবার সেই জায়গায় টাইলস বসিয়ে মূল ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে রাখে।
রেলের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে চিলাহাটি হয়ে ভারতের রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চিলাহাটি রেলস্টেশনকে আধুনিক করার প্রকল্প নেওয়া হয়। এর জন্য প্রথম ধাপে ৮০ কোটি বরাদ্দ হলেও দ্বিতীয় ধাপে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৪০ কোটি টাকা করা হয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে আইকনিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ। যে আংশিক কাজ বাকি রয়েছে, তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে। তবে স্টেশন মাস্টার, দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার ও বুকিং অফিসে কোনো এসি লাগানো হয়নি। এ অবস্থায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি হস্তান্তরের জন্য উঠে পরে লেগেছে। যে কোনো সময় ভবনটি হস্তান্তর হতে পারে। এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের মালামাল সরিয়ে ফেলেছে।
ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নীলফামারী জেলার চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ী রুটে রেল যোগাযোগ চালু করা হয়। চিলাহাটি স্থলবন্দর চালু করতে চিলাহাটি রেলস্টেশনকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। সেই সঙ্গে চিলাহাটি রেলস্টেশনে নির্মাণ করা হয়েছে ব্যয়বহুল অত্যাধুনিক আইকনিক ভবন। এ আইকনিক ভবনের নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স কোম্পানি লিমিটেড।
রেলওয়ের প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিম বলেন, ফাটলের বিষয়টি জানার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, ভবনের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
মহাপরিদর্শক ফরিদ আহমেদ বলেন, বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।