Sunday, April 20, 2025

ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল, যাত্রীদের বিনামূল্যে খাইয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পাবনাবাসী

Must read

হঠাৎ বিকল ট্রেনের ইঞ্জিন। আশেপাশে স্টেশন নেই। বিকল্প আরেকটি ইঞ্জিন এসে ট্রেন সচল করতে লাগবে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। এত দীর্ঘ সময় ট্রেনে বসে থাকতে গিয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে ওঠেন যাত্রী ও ট্রেনের স্টাফরা। আর ঠিক সেই মূহুর্তে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত যাত্রীদের বিনামূল্যে দুপুরের খাবার খাইয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পাবনাবাসী। এক ফেসবুক পোস্টে পাবনার মানুষের মানবিকতার প্রশংসা করেছেন খোদ রেল কর্মকর্তা ও যাত্রীরা।

রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ট্রেনটির টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন। ছড়িয়ে পড়া সেই পোস্টে এই প্রশংসা উঠে এসেছে।

পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ের টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু ফেসবুক পোস্টে বলেন, “পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর থেকে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে চলাচল করে “ঢালারচর এক্সপ্রেস”। রবিবার সকাল ৭টার দিকে ট্রেনটি ঢালারচর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। আমি ওই ট্রেনে দায়িত্ব পালন করছিলাম। পথে সকাল ৮টা ৫ মিনিটের দিকে সাঁথিয়ার রাজাপুর স্টেশন পার হওয়ার পরে হঠাৎ করেই ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে ঈশ্বরদী থেকে বিকল্প ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুনরায় ট্রেনটি চালু করতে বেলা ১১টা ৪০ মিনিট বেজে যায়।”

তিনি বলেন, “মাঝখানে সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় ট্রেনে বসে থাকতে গিয়ে অস্থির হয়ে ওঠেন যাত্রীরা। আশপাশে স্টেশন বা দোকানপাট কিছু ছিল না। ট্রেনের স্টাফসহ অনেক যাত্রী ক্ষুধায় তৃষ্ণায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েন স্বজনরা।”

টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু বলেন, “ট্রেনের যাত্রী আর স্টাফদের এমন করুণ অবস্থা দেখে এগিয়ে আসেন রেললাইন থেকে কিছু দূরে বসবাসকারী মানুষগুলো। বিনা স্বার্থে যার যা সামর্থ্য ছিল, যার ঘরে যা রান্না করা খাবার ছিল, তাই দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। বাড়ি থেকে গৃহবধূরা খাবার নিয়ে ট্রেনের কাছে পৌঁছান। কারও হাতে ছিল ভাত-ডাল, কারও হাতে খিচুরি, কারও হাতে রুটি-সবজি, আবার কারও হাতে পানি। এর মাঝেই কেউ কেউ রান্না করে খাবার নিয়ে আসার জন্য উদগ্রীব। বৃদ্ধ এবং শিশুদের প্রতি তাদের নজর ছিল বেশি। তাদের খাবার পানিতে শান্তি পায় সবাই।”

টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “তাদের এমন মানবিক দৃষ্টান্ত আমি কোথাও দেখিনি। ওইসব মানুষগুলোর পরিবার দেখে মনে হয়েছে দিন এনে দিন খাওয়ার মতো। অথচ কিভাবে তারা মানুষের কষ্টে পাশে দাঁড়ালো। পাবনার মানুষ যে কতটা আত্মিক আর অতিথি পরায়ণ তা আবারও প্রমাণ হলো।”

ঘটনাস্থল তাঁতীবন্দ গ্রামের বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, “আমি যখন দেখলাম স্টেশনের বাইরে হঠাৎ ট্রেনটা অনেক সময় দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি অনেকে পানির জন্য, কেউবা খাবারের জন্য কষ্ট পাচ্ছে। আশপাশে কোনো দোকানপাট ছিল না। তখন আশপাশের সবাইকে সাধ্যমতো খাবার পানি নিয়ে আসতে বলি। এভাবেই হয়েছে।”

রহিমা খাতুন নামের এক গৃহবধূ বলেন, “মানুষের কষ্ট দেখে কি ভালো লাগে বলেন তো। যেখানে ট্রেন থেমে ছিল, সেখান থেকে কিছু দূরেই আমারে বাড়ি। ট্রেন অনেকক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। অনেক মানুষ। এগিয়ে গিয়ে দেখি কেউ পানি খুঁজছে, কেউ কিছু খাবার খুঁজছে। এরপর বাড়িতে গিয়ে যা ডাল-ভাত ছিল, সেগুলোই এনেই দিয়েছি। আমার নিজেরও ভালো লেগেছে।”

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article