আগামী ৩১ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ধরে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আন্তনগর ট্রেনের আসনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৬ মার্চের রেলযাত্রার আগাম টিকিট। ২৬ মার্চের জন্য ঢাকা থেকে ট্রেনের মোট আসন ২৬ হাজার ৬৫১ এবং সারা দেশের সব ট্রেনের মোট আসনসংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৬।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার শাহাদাৎ হোসেন জানান, বিশেষ ব্যবস্থায় বিক্রির তৃতীয় দিনে প্রথম ৩০ মিনিটে রেলেওয়ের ই-টিকিটিং ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপে মোট ৯৮ লাখ হিট করেছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। এ সময় সারা দেশে বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার আসনের টিকিট।
রবিবার (১৬ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয় রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোর। ঢাকা থেকে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোর আসনসংখ্যা ১৩ হাজার ৩৬৩। এর মধ্যে প্রথম ৩০ মিনিটে বিক্রি হয় ১১ হাজার ৩০০টি আসনের টিকিট। আর সারা দেশে বিক্রি হয় ১৪ হাজার ৪৪৪টি। প্রথম ৩০ মিনিটে ঢাকাসহ সারা দেশে মোট টিকিট বিক্রি হয় ২৫ হাজার ৭৪৪টি।
২০২২ সাল থেকে রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পায় সহজ ডটকম, সিনেসিস, ভিনসেন। প্রতিটি টিকিট বিক্রির বিনিময়ে তারা ২৫ পয়সা নেবে, এই শর্তে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পায়। আর অনলাইনে টিকিট বিক্রির জন্য তাদের চার্জ হিসেবে সাড়ে ৬ টাকা পাওয়ার কথা ছিল আগের নিয়ম অনুযায়ী। সহজ দায়িত্ব নেওয়ার আগে ২০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হতো। এখন অনলাইনে টিকিট বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সাধারণভাবে টিকিটপ্রতি ২৫ পয়সার পাশাপাশি অনলাইন মাশুলের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
এদিকে রেলওয়ের টিকিট বিক্রি পুরোপুরি অনলাইননির্ভর হয়নি এখনো। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ৭১ শতাংশ যাত্রী অনলাইনে টিকিট কাটছেন। বাকি ২৯ শতাংশ যাত্রীর টিকিট এখনো স্টেশন থেকে কাটতে হয়। সেখানে স্টেশন মাস্টার ও রেলের অন্য কর্মচারীরা টিকিট বুকিং দিয়ে রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই দুর্নীতির বিষয়টি রেল অনুসন্ধান করছে বলে জানান রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত মন্তব্য করতে চাননি।
ঈদযাত্রায় সংকট আছে আরও। স্বল্প দূরত্বের স্টেশনে যেতে কাউন্টার থেকে যেসব টিকিট কাটছেন যাত্রীরা, সেখানে মোবাইল ওটিপি কোড বাধ্যতামূলক করেছে রেলওয়ে। ওটিপি কোড আসতে সময় লাগছে দেড় থেকে ২ মিনিট। এতে যাত্রীরাও কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘আজ (রবিবার) সকালে দেখলাম প্রতি মিনিটে প্রায় ৯ লাখ মানুষ সার্ভারে হিট করছেন টিকিট পেতে। টিকিটের চাহিদা বিপুল। ধরুন, প্রতিদিন চাহিদা এক লাখ টিকিটের, আর রেলওয়ে দিতে পারছে মাত্র এক হাজার টিকিট। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে।’
টিকিট কেন উধাও হচ্ছে এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যা, ‘সার্ভারে যে আগে সব তথ্য আর ওটিপি কোড সাবমিট করতে পারবেন, তিনি টিকিট পাবেন আগে। এখানে একটি প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে। এখন কালোবাজারির যে অভিযোগ আছে, সেটিও সত্যি। কোনো একজন ব্যক্তি সার্ভার থেকে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাটতে পারেন। তিনি সেই টিকিটগুলো অফলাইনে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতেই মূলত সংকট তৈরি হচ্ছে। আমরা এমন দুষ্কৃতিকারীদের ধরতে অভিযান চালু রেখেছি।’
এদিকে ঈদের রেলযাত্রায় প্রতারণা এড়াতে নির্ধারিত অ্যাপ (রেলসেবা) অথবা সরাসরি কাউন্টার থেকে টিকিট ক্রয়ের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে। রেলওয়ে বলছে, গত ১৪ মার্চ থেকে ঈদযাত্রার ট্রেনগুলোর টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। বিপুল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু অসাধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান টিকিট কালোবাজারি করতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন আইডি থেকে কেনা টিকিট বেআইনিভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টা করতে পারে। এতে যাত্রীসাধারণের হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এবারের ঈদযাত্রায় (২৪ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত) একটি আইডি থেকে সর্বোচ্চ একবার চারটি টিকিট ক্রয় করা যাবে। এ ক্ষেত্রে আইডিধারী ব্যক্তির পাশাপাশি সহযাত্রীদের নামও ইনপুট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যে ব্যক্তির আইডি ব্যবহার করে টিকিট ক্রয় করা হবে, ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন ও আইডিধারী ব্যক্তির ফটোসংবলিত আইডি কার্ডসহ তাকে ভ্রমণ করতে হবে। আইডিধারী ব্যক্তি ও টিকিটে উল্লিখিত সহযাত্রী ব্যতীত অন্য কেউ ভ্রমণ করতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি নিজের আইডি ছাড়া অন্য কারও আইডি ব্যবহার করে কেনা টিকিটে ভ্রমণ করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।