Saturday, April 19, 2025

একজন ওয়েম্যান এর চিঠি: নেই ঈদের ছুটি , সরকারি নিয়ম মেনে চলে না চাকুরী

Must read

বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি পদ ওয়েম্যান। এই ওয়েম্যান পদটি সরকারি কিন্তু কোন সরকারি সুযোগসুবিধা ভোগ করে না। শুধু তারা বেতনটাই পায়। আর কিছু পায় না।
তারা কোন সরকারি ছুটি ভোগ করে না। সপ্তাহে ১ দিন রেস্ট কিন্তু ঐ দিন কাজ থাকলে বাধ্যতা মূলক করতে হয়। বছরে ২০ দিন সি/এল এবং ১০ দিন সি/সি/এল ছুটিসহ মোট ৩০ দিন। তবে এই ৩০ দিন ছুটিও দেওয়া হয় না।
তবে ভালো অফিসার হলে ৩০ দিন ছুটি কাটানো যায়। লিগ্যাল ছুটি না দিলেও চলে ছুটি নিয়ে বাণিজ্য। একদিন ছুটি নিলে দিতে হয় ২০০ টাকা। এই ছুটির বাণিজ্য করে মিস্ত্রী+হেডমেড+পিডব্লু। এখানে পিডব্লু হলো নাটের গুরু। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ইয়েনও এই বানিজ্যের সাথে জড়িত থাকে। টাকা দিয়ে ছুটি নিতে বাধ্য করে মিস্ত্রী। ছুটি না নিলো খারাপ আচারণ করে। কাজের প্রেসার দেয়। বিভিন্ন ভাবে সমস্যা করে। বলতে গেলে ওয়েম্যানদের এক প্রকার বাধ্য হয়ে ছুটি নিতে হয়।
আমাদের কাজগুলো ভারি এবং খুবই পরিশ্রমের তাই প্রতিবাদও করা যায় না। প্রতিবাদ করলে কাজের প্রেসার বেশি দেয় আর অফিসারদের কাছে বললেও কোন লাভ হয় না। কারন এগুলো তো তারাই করায়। যাদেরকে মিস্ত্রী করা হয় তারা অফিসারদের পা চাটা গোলাম। যারা পা চাটা গোলামী করতে পারে তাদেরকেই মিস্ত্রী করা হয় সে কাজ পারুক আর না পারুক।
অধিকাংশ মিস্ত্রী কাজ বুঝে না। তাদের একটাই প্লান কিভাবে ওয়েম্যানদের কাছ থেকে টাকা ইনকাম করবে। কোন ওয়েম্যান যদি অসুস্থ হয় তাহলে তার প্রতি কোন সহানুভূতি দেখানো হয় না। বরং তার এই অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে করে টাকা ইনকাম করার ধান্দা। কোন ওয়েম্যান মারা গেলেও রেলকর্তৃপক্ষ কোন সহয়তা করে না। ওয়েম্যানদের ছুটির বাণিজ্যটা খুবই ভয়াবহ। এই ছুটির বাণিজ্যের জন্যই করা হয় যত অত্যাচার।
ছুটির বাণিজ্য নিয়ে আরও কিছু কথা। টাকা দিয়ে ছুটি নিয়েও কোন শান্তি নাই। যদি লাইন পরিদর্শনে হেড মিস্ত্রী আসে তাহলে তাকে ২০০/৩০০ টাকা দিলে সমস্যা হয় না। কিন্তু পিডব্লু বা ইয়েন স্যার আসে তাহলে এবসেন্ট দেওয়া হয়। চোরেরে কয় চুরি কর আর গেরোস্তরে বলে সজাগ থাকো। সরকারি কোন ডিপার্টমেন্টে এবসেন্ট নাই শুধু আমাদের ওয়েম্যানদের এবসেন্ট দেওয়া হয়।
অনেক ওয়েম্যান আছে যারা অফিসারদের সাথে কন্টাক করে। অর্ধেক বেতন অফিসার নিবে আর অর্ধেক বেতন পিডব্লু নিবে। কিছু কিছু ক্ষেত্র কন্ট্রাক করতে বাধ্য করা হয়। এই কন্ট্রাকের কাজগুলো মিস্ত্রী, হপডমিস্ত্রী, পিডব্লু এবং কোন কোন ক্ষত্রে ইয়েন করে থাকে।
যখন লাইন পরিদর্শনে জি/আই/বি/আর আসে তখন লক্ষ লক্ষ টাকা বাজেট হয়। কিন্তু ওয়েম্যানদের জন্য কোন বাজেট থাকে না। জি/আই/বি আর প্রোগ্রাম হলে ওয়েম্যানদের কাজের পরিমান কয়েকগুণ বেড়ে যায়। যে লাইনে জি/আই/বি/আর তার পাশের লাইনের ওয়েম্যানদের নিয়ে আসা হয়।
আমাদের রেলের ভাষা ওয়েম্যানদের এক একটি টিমকে গ্যাংগ বলা হয়। এক গ্যাংগের সীমানা ৬ কিলো মিটার। এই ৬ কিলোমিটার কাজ করতে আমাদের প্রায়ই গাড়িতে যাতায়াত করতে হয়। আমাদের যন্ত্রপাতি গুলো খুব ভাড়ি হয়। এগুলো নিয়ে বেশি হাটা যায় না। তাই আমাদের প্রায়ই কাজের প্রয়োজনে গাড়িতে যেতে হয়। এর জন্য আমাদের কোন টিএ বিল দেওয়া হয় না। একটি গ্যাংগ যখন তার নিজ গ্যাংগের বাহিরে অন্য গ্যাংগে কাজ করতে তখন তাদের কে দৈনিক ৪০০ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এই নিয়ম কাগজ-কলমে। বাস্তবে এর কোন মিল নাই।

লাইনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেলে সে গুলো ওয়েম্যানদের অফিসে গিয়ে আনতে হয়। সম্পূর্ণ খরচ ওয়েম্যানদের বহন করতে হয়। এখানেও ওয়েম্যানরা কোন টিএ বিল করতে পারে না। অথচ আমাদের মালটানা গ্যাংগার আছে, ট্রলি আছে যে গুলো দিয়ে প্রতি গ্যাংগে মাল বহন করে নিতে পারে। রেলকর্তিপক্ষ সব দিক দিয়ে ওয়েম্যানদের অত্যচার করতেছে। অফিসার যখন লাইন চেক করতে আসে তখন ওয়েম্যানদের কুকুরের মত আচারণ করে। মনে হয় ওয়েম্যানরা মানুষ না।
টিএ বিল নিয়ে আরও কিছু কথা। যখন টিএ বিল করা হয় তখন অফিসারা দেড় লক্ষ, দুই লক্ষ করে টিএ বিল করে। তাদের কাছের লোকগুলোকে ২০,৩০,৪০,৫০,৬০,৭০ হাজার করে টিএ বিল করে। এখান থেকে অফিসাররা আবার পার্সেন্টিস খায়।
ওয়েম্যানদের বিয়ের কোন ছুটি দেওয়া হয় না। বিয়ের ছুটি নিতে গেলে সি/এল থেকে দিবে সর্বোচ্চ ৪-৫ দিন। বাংলাদেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিয়ের আলাদা ছুটি আছে এমনকি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানেও। আমাদের রেলওয়েতে আছে কিন্তু ওয়েম্যানদের দেওয়া হয় না। কারন সি/এল ছুটি শেষ হলে টাকা দিয়ে ছুটি নিতে বাধ্য হবে। এই জবটা কোন দিক থেকেই সরকারি কোন নিয়ম মেনে চলে না।
ওয়েম্যানদের নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরা সর্বদা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। কিন্তু নেই কোন ঝুঁকি ভাতা। কাজ করতে গিয়ে কোন ওয়েম্যান যদি এক্সসিডেন্ট করে তাহলেও তারপ্রতি কোন সহানুভূতি দেখানো হয় না। যখন দেশের সকল মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয় তখনও তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য করে।
অফিসে কোন কাজে গেলে টাকা না দিলে কোন কাজ হয় না। একই কাজের জন্য যতবার যাবে ঠিক ততবারই টাকা দিতে হয়। পিডব্লু বলেন আর ইয়েন অফিস বলেন ডিএন অফিস বলেন।
ওয়েম্যান থেকে প্রমোশন হয়ে কী ম্যান, কী ম্যান থেকে প্রমোশন হয়ে মেড বা মিস্ত্রী হয়। আমাদের প্রমোশন হয় কিন্তু বেতনও বাড়ে না এবং গ্রেডও চেইঞ্জ হয় না।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article