পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তাকে নগ্ন করে নারীর সঙ্গে ছবি তুলে ও ভিডিওচিত্র ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা করার অভিযোগে দুই তরুণীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করলেও সোমবার ঘটনাটি প্রকাশ করেছে।গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নগরীর উপশহর এলাকার আব্দুর রহিমের মেয়ে সাবিনা ওরফে রজনী (২৫), বড় বনগ্রাম ফুলতলা এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুল গাফ্ফার (৩০) ও চন্দ্রিমা থানার নামোভদ্রা এলাকার রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে রিয়া আক্তার পাখি (২০)। পুলিশ সোমবার বিকালে তাদের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে।
পুলিশ ও মামলার বাদী ঘটনাকে পরিকল্পিত ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা বলে দাবি করেছেন।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানান, গ্রেফতারকৃতরা প্রতারক চক্রের সদস্য বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তারা এভাবেই টাকাওয়ালা লোক অথবা সরকারি চাকরি করেন এমন লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে বাসায় ডেকে নিয়ে প্রতারণা করে থাকেন।
বোয়ালিয়া মডেল থানায় দায়েরকৃত এ সংক্রান্ত মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, কিছুদিন আগে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মী ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান সহকারী মাহফুজুর রহমান গ্রেফতারকৃত সাবিনা আক্তার রজনীর সঙ্গে ঢাকায় ট্রেনে যাওয়ার সময় পরিচয় ঘটে। সেই সূত্রে রজনী গত শনিবার সকালে ফোনে মাহফুজুর রহমানকে নিজেদের উপশহরের বাসায় চায়ের দাওয়াত দেন। শনিবার সন্ধ্যার পর মাহফুজুর রহমান রজনীদের উপশহরের বাসায় চা খেতে যান। এ সময় সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন গ্রেফতারকৃত রিয়া আক্তার পাখি ও আব্দুল গাফফারসহ আরও কয়েক যুবক।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, এ সময় মাহফুজুর রহমানকে গ্রেফতারকৃত তিনজন ছাড়াও অন্যরা মিলে তাকে নগ্ন করে শারীরিকভাবে ব্যাপক নির্যাতন করেন। পরে একটি মেয়ের সঙ্গে নগ্ন করে ছবি তোলেন এবং তার ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। তারা মাহফুজুর রহমানের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না পেলে নারীর সঙ্গে তার নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।
টাকার নিশ্চয়তা পেতে একটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মাহফুজের কাছে থাকা ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি সোনার আংটি ও পরে বিকাশে ৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়।
ঘটনার পর ছাড়া পেয়েই রেল কর্মকর্তা বোয়ালিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ মামলা রেকর্ড করে দুই তরুণীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেন ও মালামাল উদ্ধার করেন। আইনি প্রক্রিয়ায় তিনজনকে সোমবার বিকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পরিকল্পিতভাবে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। এমন আরও কোনো প্রতারণার ঘটনা উদঘাটনে তিনজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এছাড়া এই চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত তা জানতে ও তাদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা করছে।
এদিকে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নগরীতে এমন ধরনের প্রতারণার আরও অভিযোগ তাদের কাছে আছে। সেগুলোও তদন্ত করা হচ্ছে। এক বা একাধিক চক্র নগরীতে টাকা-পয়সা আছে এমন লোকদের টার্গেট করে একই কৌশলে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।