স্টাফ রিপোর্টার :
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে দীর্ঘদিন ধরে তেল চুরি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, চোর চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও স্থানীয় যুবদল নেতা সোহরাব হোসেন। ঘুষের বিনিময়ে চক্রটিকে সহযোগিতা করছেন রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দীন খন্দকার এবং আখাউড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. এরশাদুর রহমান। তাঁদের মদদে পুলিশ তেল চুরিতে বাধা দেয় না। এমনকি মামলা করা হলেও সোহরাবের নাম বাদ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি ট্রেনের ইঞ্জিনে ৩ হাজার লিটার পর্যন্ত তেল ধারণক্ষমতা রয়েছে। চোর চক্র ট্রেনের চালক ও গার্ডের সহযোগিতায় নির্দিষ্ট স্থানে ট্রেন থামিয়ে তেল সরিয়ে নেয়। সাধারণত আখাউড়া, ইমামবাড়ী ও কোড্ডা এলাকায় তেল চুরি করা হয়। রেলওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আখাউড়া রেলওয়ে থানার একটি দল তেল চুরির বিরুদ্ধে ৭এপ্রিল গভীর রাতে অভিযান চালায়। এ সময় কোড্ডা রেলসেতুর পাশে
চোর চক্রের হোতা সোহরাব হোসেন
৬০৩ নম্বর কনটেইনার ট্রেন থেকে ২১০ লিটার তেল জব্দ করা হয়। অন্যদিকে অভিযান শুরুর আগেই ওই দিন রাত ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে পরদিন সকাল ১০টা ২০ মিনিটের মধ্যে সোহরাবের সঙ্গে ওসি জসিমের হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার আলাপ হয়।
তেল জব্দের এ ঘটনায় পরদিন ৮ এপ্রিল আখাউড়া রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শোভন কুমার নাগ বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে কনটেইনার ট্রেনের চালক মো. নাসির উদ্দিনসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে এতে সোহরাবকে অভিযুক্ত করা হয়নি। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের সহকারী কমান্ড্যান্ট মো. ফিরোজ আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে মামলার আসামি নাসির বলেন, ‘লাল বাতি থাকায় ট্রেন থামানো হয়। পরে সবুজ বাতি পেয়ে ট্রেন চালানো হয়। তেল
চুরির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
তেল চুরির সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাব বলেন, ‘আমি তেল চুরির কোনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নই। এলাকার মেম্বার হিসেবে মানুষের পাশে আমাকে থাকতে হয়।’ ওসির সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জনপ্রতিনিধি তাই সময়ে-অসময়ে ওসির সঙ্গে কথা বলতেই পারি।’
অন্যদিকে ওসি জসিম সিন্ডিকেট থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জানান, তেল চুরির খবর পেয়ে তাঁর দল অভিযান চালিয়ে তেল জব্দ করে। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তেল ফেলে পালিয়ে যান। ফলে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। সিন্ডিকেটের প্রধান সোহরাবের সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘একজন মানুষের সঙ্গে কথা হতেই পারে।’ এ ছাড়া এএসপি এরশাদুর দাবি করেছেন, তেল চুরির সিন্ডিকেট থেকে তিনি কোনো টাকা নেননি। যদি কেউ তাঁর নামে টাকা নেন, তবে তা তাঁর অজানা।
যোগাযোগ করা হলে জিআরপি সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, তেল চুরির ঘটনা তদন্তাধীন। রেলওয়ে পুলিশের নিয়মিত অভিযান চলছে এবং যেকোনো প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকেই আইনের আওতায় আনা হবে। যদি পুলিশ বাহিনীর কেউ সিন্ডিকেটে জড়িত থাকেন, প্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।