Wednesday, April 30, 2025

মেট্রোরেলে র‌্যাপিড পাস কিনতে জটিলতা

Must read

রাজধানীতে মেট্রোরেলের যাত্রীদের ভাড়া পরিশোধের জন্য স্থায়ী কার্ড র‌্যাপিড পাস কেনা নিয়ে সংকট সহসা কাটছে না। জাপানি প্রতিষ্ঠান সনির ফেলিকা কার্ড তৈরির প্রযুক্তি মানতে বাধ্যবাধকতা থাকায় শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব থাকছে র‌্যাপিড পাস সরবরাহে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান র‌্যাপিড পাস সরবরাহের অনুমোদন পেলেও তারা কতদিন টিকে থাকতে পারবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

র‌্যাপিড পাস কিনতে জটিলতা। ইনফোগ্রাফিকসরাজধানীতে মেট্রোরেলের যাত্রীদের ভাড়া পরিশোধের জন্য স্থায়ী কার্ড র‌্যাপিড পাস কেনা নিয়ে সংকট সহসা কাটছে না। জাপানি প্রতিষ্ঠান সনির ফেলিকা কার্ড তৈরির প্রযুক্তি মানতে বাধ্যবাধকতা থাকায় শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব থাকছে র‌্যাপিড পাস সরবরাহে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান র‌্যাপিড পাস সরবরাহের অনুমোদন পেলেও তারা কতদিন টিকে থাকতে পারবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। মেট্রোরেলের যাত্রীদের জন্য দুই ধরনের স্থায়ী টিকিট রয়েছে- একটি এমআরটি পাস, আরেকটি র‍্যাপিড পাস। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সরবরাহ করে এমআরটি পাস। আর ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) দেয় র‌্যাপিড পাস। এমআরটি আর র‌্যাপিড পাস দুটিই সনি কোম্পানির ফেলিকা প্রযুক্তির। সনির ফেলিকা প্রযুক্তির এমআরটি বা র‌্যাপিড পাস কিনতে পারে না ডিএমটিসিএল ও ডিটিসিএ। দুই কর্তৃপক্ষকে নির্ভর করতে হয় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা জাপানের কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর, যারা সনির ফেলিকা প্রযুক্তির এই দুটি পাস সংযোজন (অ্যাসেম্বল) করতে পারে। ডিএমটিসিএল জাপানের নিপ্পন সিগনাল কোম্পানি থেকে এমআরটি পাস কেনে। তবে ডিটিসিএ নির্ভর করছে বাংলাদেশি কোম্পানি সিল্কওয়েজ কার্ড অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেডের ওপর। তারা সনির ফেলিকা প্রযুক্তি ব্যবহার করে র‌্যাপিড পাস দেশেই সংযোজন করে, এর চিপ আসে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া থেকে। তবে এ ক্ষেত্রে সনির ফেলিকা প্রযুক্তি সংযোজনের নানা শর্ত মানতে হয় সিল্কওয়েজকে। জাপানের নিপ্পন সিগনাল কোম্পানি থেকে প্রতিটি কার্ড কিনতে গড়ে ২৫০ টাকা খরচ করে ডিএমটিসিএল। সিল্কওয়েজ থেকে সংযোজন হয়ে আসা র‌্যাপিড পাস কিনতে ডিটিসিএকে ৩২০ টাকা খরচ করতে হয়। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান র‌্যাপিড পাস সংযোজনে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি করে। তারা সিল্কওয়েজের দর থেকে ১৫ শতাংশ কমে ডিটিসিএকে র‌্যাপিড পাস সরবরাহ করবে বলে জানায়। গত বছর থেকে ডিটিসিএ র‌্যাপিড পাস কিনতে ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়েছে। তাই সরাসরি কেনা পদ্ধতি ছেড়ে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে অন্যান্য কোম্পানিকে সুযোগ দেয়। সেসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ৪টি কোম্পানি চূড়ান্ত পর্যায়ে এলেও হতাশ হতে হয়েছে ডিটিসিএকে। কারণ সনির ফেলিকা প্রযুক্তির শর্ত মেনে কার্ড সংযোজন করতে গিয়ে কারিগরি জটিলতায় পড়েছে এই কোম্পানিগুলো। তাই ঘুরেফিরে র‌্যাপিড পাস সরবরাহে সিল্কওয়েজের কর্তৃত্ব রয়ে গেছে। ডিটিসিএ কর্মকর্তারা বলেন, এই সুযোগ নিয়ে ইচ্ছামতো ‘ভ্যারিয়েশন অর্ডার’ বানিয়ে র‌্যাপিড পাস বাজারজাত করছে সিল্কওয়েজ।জানা গেছে, ডিটিসিএ প্রতিটি র‌্যাপিড পাস কিনতে ৩০০ টাকার বেশি খরচ করতে না চাইলেও এ প্রতিষ্ঠানটির একচ্ছত্র কর্তৃত্বে ৩২০ টাকা দরে এই পাস কিনতে বাধ্য হচ্ছে। ডিটিসিএর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন দর-কষাকষির বৈঠকে ডিটিসিএ প্রতিটি র‌্যাপিড পাসের দাম ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় নামিয়ে আনতে দেনদরবার করেছে। কিন্তু সিল্কওয়েজ র‌্যাপিড পাসের দাম ৩২০ টাকার নিচে নামাতে চাইছে না। সম্প্রতি ই-জিপি টেন্ডারে ডিটিসিএ র‌্যাপিড পাস সরবরাহ করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানিয়েছে। এতে সিল্কওয়েজ ছাড়া আর একটি প্রতিষ্ঠান এখন র‌্যাপিড পাস সরবরাহের কাজ পেয়েছে। সেটি হলো প্রাইম পাওয়ার সলিউশন। এ প্রতিষ্ঠানটি ডিটিসিএকে আড়াই লাখ র‌্যাপিড পাস এনে দিচ্ছে। তারা ২৯০ টাকায় প্রতিটি পাস সরবরাহ করছে। তারাও ইন্দোনেশিয়ার একটি কোম্পানির তৈরি পাস বাংলাদেশে নিয়ে আসবে।তবে নতুন প্রতিষ্ঠানটি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। র‌্যাপিড পাস কেনাসংক্রান্ত প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন ডিটিসিএর সিনিয়র রোড সেফটি স্পেশালিস্ট মো. মামুনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সে সময়ে যে প্রতিষ্ঠানগুলো র‌্যাপিড পাস সরবরাহ করার কথা বলেছিল, তাদের কিছু কারিগরি ত্রুটি ছিল। সনির ফেলিকা কার্ড অ্যাসেম্বল করতে যে ধরনের প্রযুক্তি তাদের থাকার কথা, তার সবকিছু তাদের নেই। এখন সনির ফেলিকা প্রযুক্তি তো ডিটিসিএকে মেনে চলতেই হবে। আর সিল্কওয়েজ ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান জাপানি প্রতিষ্ঠানের কার্ড অ্যাসেম্বলের সব নিয়ম মানছে কি না, তা আমরা জানি না। নতুন যেসব প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে, তাদের টেকনিক্যাল এরর থেকে যাচ্ছে।’র‌্যাপিড পাস কিনতে ডিটিসিএ ব্যয় কমাতে না পারায় এই পাস নিজেরাই সরবরাহ করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা। কিন্তু সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে তাদের আবেদন ধোপে টেকেনি। এমআরটি-৬ প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘ডিএমটিসিএল র‌্যাপিড পাস কিনতে অনুমতি চেয়েছিল। তবে সনির ফেলিকা প্রযুক্তির কার্ড কিনতে একটা সিকিউরিটি কোড লাগে, যেটা আমাদের নেই। সেই কোড আছে শুধু ডিটিসিএর কাছে। আমরা সিকিউরটি কোড পেতে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। অনুমতি পাইনি। তাই এখন ডিএমটিসিএল নিজেরা যদি কার্ড কিনেও আনে সব ডাম্পিং করতে হবে।’এ বিষয়গুলো নিয়ে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার ও অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মো. মোতাছিম বিল্লাহকে একাধিকবার ফোন করলেও তারা সাড়া দেননি।এ সপ্তাহে কাটছে র‌্যাপিড পাসের সংকটর‌্যাপিড পাসের চাহিদা এখন তুঙ্গে। এমন পরিস্থিতিতে চাহিদামাফিক র‌্যাপিড পাস সরবরাহ করতে পারছে না ডিএমটিসিএল ও ডিটিসিএ। ইতোমধ্যে ডিটিসিএর র‌্যাপিড পাস কেনার প্রকল্পের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। তাই এখন রাজস্ব খাত থেকে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে ডিটিসিএকে। এখন ই-জিপি দরপত্র আহ্বান করে র‌্যাপিড পাস সরবরাহ করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে চলতি সপ্তাহে র‌্যাপিড পাসের সংকট কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন ডিটিসিএর সহকারী প্রোগ্রামার (ক্লিয়ারিং হাউস অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) রাফি হায়দার। তিনি জানান, বুধবার (৩০ এপ্রিল) ডিটিসিএ ১ লাখ র‌্যাপিড পাস পাবে। দেড় মাসের মধ্যে সব মিলিয়ে সাড়ে ৪ লাখ র‌্যাপিড পাস আসবে। ডিটিসিএ চলতি সপ্তাহে ৬০ হাজার র‌্যাপিড পাস ডিএমটিসিএলকে সরবরাহ করবে।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article