Tuesday, November 19, 2024

ডিসেম্বরেই চলবে মেট্রোরেল

Must read

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনা নিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে মেট্রোরেল লাইন-৬-এর কাজ।

জাপান থেকে প্রথম মেট্রো ট্রেন সেট উত্তরা ডিপোতে পৌঁছার পর টেস্ট রান বা পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর প্রস্তুতি চলছে। ট্রেন পরিচালনার জন্য ট্রেন অপারেটর, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। তবে মেট্রোরেল দেশে প্রথম হওয়ায় কাজের ধরন বুঝতে না পারায় কিছু পদে প্রয়োজনীয় প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সচিব (অতিরিক্ত সচিব) ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. আবদুল ওয়াদুদ সময়ের আলোকে জানান, মেট্রোরেলের জন্য ট্রেন অপারেটর, সহকারী ব্যবস্থাপক, স্টেশন কন্ট্রোলার, সেকশন ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পদে ধাপে ধাপে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সম্প্রতি ৬২ জন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৫ মার্চ ট্রেন অপারেটর পদে লিখিত পরীক্ষায় ৩০ জন উত্তীর্ণ হলেও করোনার কারণে মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। তিনি জানান, মেট্রোরেল দেশে নতুন হওয়ায় কাজের ধরন বুঝতে না পারায় ট্রেন অপারেটরসহ কয়েকটি পদে প্রয়োজনীয় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। কর্মকর্তা পদ হওয়া সত্ত্বেও দেশে নতুন হওয়ায় অনেকে আবেদন করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

মেট্রোরেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মোট ১৬টি স্টেশনের প্রতিটির কাজই এখন চলমান। এর মধ্যে প্রথম পাঁচটি প্লাটফর্মের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ। বাকিগুলোরও পিলার বসে গেছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের গড় অগ্রগতি ৮ মে পর্যন্ত ৬৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। 
মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন তালুকদার জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন বর্ধিত করার জন্য অংশীজন সভা ও হাউসহোল্ড সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে মূল নকশা ও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। 
মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য ২৪ সেট ট্রেন তৈরি করছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি। প্রতিসেট ট্রেনের দুইপাশে দুটি ইঞ্জিন থাকবে। এর মধ্যে থাকবে চারটি করে কোচ। ১২টি কোচ ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। গত ৩১ মার্চ কোচের প্রথম চালান এবং ৯ মে দ্বিতীয় চালান জাপান থেকে মোংলা বন্দরে পৌঁছে। প্রথম মেট্রো ট্রেন সেট গত ২৩ এপ্রিল উত্তরা ডিপোতে পৌঁছানোর পর ধারাবাহিকভাবে টেস্ট করা হচ্ছে। বর্তমানে টেস্ট রান ডিপোর ভেতরে এবং ভায়াডাক্টের ওপর করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সচিব (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবদুল ওয়াদুদ। তিনি জানান, টেস্ট রান শেষ হওয়ার পর ট্রায়াল রান করা হবে। কর্মকর্তারা জানান, চলতি মাসের শেষদিকে দেশের প্রথম মেট্রোরেল পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রার মাধ্যমে রেলব্যবস্থার প্রাথমিক কার্যক্রমগুলোকে পরীক্ষা করা হবে। টেস্ট রানের সময় ট্রেনটি ডিপোর ভেতরের সব রেললাইনের ওপর দিয়ে চালানো হবে এবং তারপর ভায়াডাক্টের (রেলসেতুর ওপর) ওপর দিয়েও চালানো হবে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্ট্রাল এবং উত্তরা দক্ষিণÑ এ তিনটি স্টেশন নিয়েই ট্রায়াল রান করার পরিকল্পনা থাকলেও চেষ্টা করা হচ্ছে এটাকে বাড়িয়ে মিরপুর পর্যন্ত ট্রায়াল রান করার। তাহলে শহরের মধ্যকার মানুষ ট্রেনগুলো দেখতে পাবে। এ লক্ষ্যে উত্তরার প্রথম তিনটি স্টেশনের পুরো কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্ধিত সময় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। করোনার সময় প্রথম কয়েক মাস কাজের গতি কম থাকায় মেট্রোরেলের ২০ কিলোমিটারের সম্পূর্ণ অংশ চালুর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ১৬ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেলের সম্পূর্ণ অংশের পরিবর্তে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর মতিঝিল পর্যন্ত চালু করতে আরও এক বছর সময় লাগতে পারে বলে প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মেট্রোরেল লাইন মতিঝিল থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করতে আরও সময় লাগবে। এ ক্ষেত্রে কমলাপুর রেলস্টেশন ভেঙে ফেলার প্রয়োজন হবে। তবে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে কঠিনভাবে করোনা মোকাবিলা করতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। প্রকল্পের এপ্রিল মাসের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার সংক্রমণ শুরুর পর এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৬১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসেই করোনায় আক্রান্ত হন ২১৯ জন। তবে কোনো কর্মী মারা যাননি। মেট্রোরেল প্রকল্পে প্রায় সাত হাজার বিদেশি কাজ করছেন। প্রকল্পে কর্মরত দেশি জনবলকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও বিদেশি জনবলের জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা যায়নি। এ কারণে বিদেশি কর্মীদের মধ্যে করোনাভীতি কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ অবস্থায় বিদেশি কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য গত ৭ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্রুত বিদেশি কর্মীরা ভ্যাকসিন পাবেন বলে আশাবাদী কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বিদেশি কর্মীরা ভ্যাকসিন না পাওয়ায় করোনা আতঙ্কে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ বিঘ্নিত হতে পারে। 
ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। এতে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কোচ। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এ ট্রেন। উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article