দেশের পূর্বাঞ্চলীয় রেলে গত বছর ৩০টি ইঞ্জিন যুক্ত হয়। যার ফলে লক্কড়ঝক্কড় ট্রেনগুলো গতিতে ফিরতে শুরু করে। মেরামত খরচ, ধীরগতি ও পুরাতন যন্ত্রাংশ না পাওয়ায় আয়ুষ্কাল চলে যাওয়া ইঞ্জিনগুলোর (লোকোমোটিভ) ব্যয় বেশি। এসব ক্ষতি থেকে মুক্তির জন্য এবং যাত্রীদের দ্রুত সেবার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়েতে আরও ৭০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ ইঞ্জিন যুক্ত হবে। কোরিয়া থেকেই কেনা হবে এসব ইঞ্জিন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর জনগণের চাহিদা ও রেল সেক্টরের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০১১ সালে ২৮ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে রেলপথ বিভাগ নামে নতুন বিভাগ সৃষ্টি করে। পরে একই বছরের ৪ ডিসেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটেড মাফিয়ার কবলে পড়ে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়েকে আলোর মুখ দেখায় ক্ষমতাসীন সরকার। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়নের পদক্ষেপে যুক্ত হবে আরও ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন, যা কেনা হবে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ২৮৭৭ কিলোমিটার রেল লাইন নেটওয়ার্কে যুক্ত আছে দেশের ৪৪টি জেলা। সরকারে অনেক পালাবদল ঘটলেও রেল সেক্টরের প্রতি কোন খেয়াল ছিল না। ফলে দিনে দিনে এই খাতটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রেলপথের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হতে থাকে।
রেলসূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির জন্য মোট দুই হাজার ৬৭৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ দেবে কোরিয়ান একটি কোম্পানি। ঋণের আন্তঃব্যাংক সুদের হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে রেলওয়ের ইতিহাসে এতবড় প্রকল্প আগে কখনও নেয়া হয়নি। রেলের উন্নয়নে এর আগে কোন সরকারই গুরুত্ব দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাগ্রতায় এসব প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে বলে জানান দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এর আগে গত বছর রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে যুক্ত হয় নতুন ৩০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন।
জানা গেছে, রেলওয়ের জন্য ৭০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্প (১ম সংশোধিত) ১০ জুলাই ২০১১ সালে একনেকে অনুমোদিত হয়। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে অনুমোদিত হওয়া প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন ধোঁয়াশা ছিল। মেয়াদ ছিল প্রকল্পের ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। পরে লোকোমোটিভ সংগ্রহের বিষয় পর্যালোচনা করে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে সংশোধিত ডিডিপি ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একনেকে অনুমোদিত হয়। শুধু তাই নয়, কোরিয়া রেটাম কোম্পানি থেকে এসব ইঞ্জিন বাংলাদেশে ১৯ বছরে ১৯ বার এজেন্সি ফি না দিয়ে একবারই এজেন্সি ফি দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুরুতে অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় প্রকল্পটি প্রায় অনিশ্চিত ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর একাগ্রতায় আলোর মুখ দেখে প্রকল্পটি। প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দেন যেকোন সহজ শর্ত যুক্ত ক্রেডিট লাইনে অর্থ সংগ্রহের, যাতে দ্রুত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে যেসব লোকোমোটিভ রয়েছে তার প্রায় ৯০ শতাংশেরই আয়ুষ্কাল অতিক্রম করেছে। অনেক ইঞ্জিন আয়ুষ্কাল পার হওয়ার পর ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে, যার ফলে পথিমধ্যে বর্তমানে বিকল হচ্ছে। তিনি জানান, পূর্বাঞ্চলে মোট ১৫৩টি ইঞ্জিন রয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিকল ইঞ্জিনের সংখ্যা ৪৫টি।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ৪৫টির অধিক প্রকল্প হাতে নেয়। যার মধ্যে অন্যতম বড় প্রকল্প হলো ৭০টি লোকোমোটিভ। এছাড়া দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন ও পদ্মা বহুমুখী সেতুতে রেল যোগাযোগসহ মেগা প্রকল্পগুলোর রেলপথ যোগাযোগের বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মাইলফলক। এসবের ধারাবাহিতায় সারাদেশে রেলপথে যাত্রীদের সেবার মান আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রঃ দৈনিক জনকন্ঠ