বিশেষ প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি (BRPS) অভিযোগ করেছে যে, সাপ্তাহিক “বিশ্ব মিডিয়া” নামের একটি পত্রিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে ধারাবাহিকভাবে রেলওয়ে প্রশাসন, রেলপথ মন্ত্রণালয় ও পোষ্য সোসাইটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। এ বিষয়ে সংগঠনটি রেলপথ সচিব বরাবর একটি উচ্চপর্যায়ের লিখিত আবেদন দাখিল করে আইনানুগ তদন্ত ও “অডিট আপত্তি সংক্রান্ত সংবাদ প্রচারের নীতিমালা” প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।
অভিযোগের সারমর্মঃ
পোষ্য সোসাইটির অভিযোগ, “বিশ্ব মিডিয়া” নিয়মিতভাবে “রেলওয়ের ডিজি লুটপাটের হোতা”, “দুদক ম্যানেজ করে প্রকল্পের টাকা লুটপাট”, “রেলের ডিজি আফজালকে রক্ষায় পোষ্য সোসাইটি মরিয়া” “সচিব বন্ধু, উপদেষ্টা বড় ভাই আফজালের”— ইত্যাদি শিরোনামে অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করছে, যার ফলে প্রশাসনিক অস্থিরতা ও কর্মকর্তাদের মানসিক হয়রানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির স্বাক্ষরিত আবেদনপত্রে বলা হয়েছে —
“এই ধরনের অপসাংবাদিকতা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং পুরো রেল প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এর মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যা প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা ও জনআস্থা উভয়ের জন্যই হুমকি।”
অডিট আপত্তির বাস্তবতা: প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, অপরাধ নয়ঃ
পত্রে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, অডিট আপত্তি মানেই দুর্নীতি নয়। এটি সাধারণত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ, যা নথি-নিরীক্ষা, অনুমোদন পার্থক্য বা হিসাব যাচাইয়ের ঘাটতির কারণে দেখা দেয়।
“অডিট আপত্তির অর্থ তদন্তযোগ্য বিষয়, কিন্তু অপরাধ নয়।”
এই আপত্তিগুলো ব্যাখ্যা, পুনঃযাচাই ও প্রশাসনিক নিষ্পত্তির মাধ্যমে নিয়মিত সমাধান হয়। অথচ কিছু গণমাধ্যম যাচাই ছাড়া এই বিষয়গুলোকে “লুটপাট” বা “দুর্নীতি” হিসেবে প্রচার করছে— যা সত্য বিকৃতি এবং পেশাগত নীতিমালার গুরুতর লঙ্ঘন।
অডিট আপত্তিকে দুর্নীতি বলা কেন বিপজ্জনকঃ
বাস্তবতা-ভুল ব্যাখ্যা-ফলাফল
বাস্তবতাঃ অডিট আপত্তি = তদন্তযোগ্য বিষয়
ভুল ব্যাখ্যাঃ অনেকেই ধরে নেয় = দোষী প্রমাণ
ফলাফলঃ কর্মকর্তা হেনস্তা, সামাজিক অপমান
বাস্তবতাঃ অধিকাংশ আপত্তি পরে নিষ্পত্তিযোগ্য
ভুল ব্যাখ্যাঃ সংবাদে তুলে ধরা হয় “অর্থ কেলেঙ্কারি” লুটপাট হিসাবে
ফলাফলঃ জনমনে বিভ্রান্তি ও প্রশাসনিক সংকট
বাস্তবতাঃ তদন্তের আগেই মিডিয়া বিচার
ভুল ব্যাখ্যাঃ স্বাভাবিক ব্যাখ্যার সুযোগ নষ্ট
ফলাফলঃ ন্যায় বিচার বিঘ্নিত, জনআস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন
পোষ্য সোসাইটির অবস্থান ও পদক্ষেপঃ
সংগঠনটি জানিয়েছে, বিভ্রান্তিকর সংবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা আদালতে মানহানি মামলা দায়ের করেছে, যার তদন্তভার দিয়েছে পিবিআই চট্টগ্রামকে।
একই সঙ্গে বগুড়া জেলা আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে (তদন্তভার সিআইডি বগুড়া) এবং নীলফামারী, নাটোর ও রাজবাড়ী জেলা শাখা থেকেও সম্পাদকের নামে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
তবে পোষ্য সোসাইটি দুঃখ প্রকাশ করেছে যে, এত গুরুতর পরিস্থিতিতেও রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে প্রশাসন এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়নি, যা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।
নীতিগত প্রস্তাবনা ও করণীয়ঃ
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি পাঁচ দফা নীতিগত সুপারিশ দিয়েছে—
১️. Audit Response & Information Cell গঠন:
রেলওয়ের অভ্যন্তরে একটি কেন্দ্রীয় সেল তৈরি করে সকল অডিট আপত্তির জবাব ও নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া এককভাবে পরিচালনা করা।
২️. Information Verification Desk স্থাপন:
রেলওয়ের জনসংযোগ দপ্তরে সাংবাদিকদের জন্য একটি তথ্য যাচাই ডেস্ক স্থাপন, যাতে যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো সংবাদ প্রচার না হয়।
৩️. গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়ন:
তথ্য মন্ত্রণালয় ও প্রেস কাউন্সিলের সহযোগিতায় নীতিমালা প্রণয়ন, যাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে — “অভিযোগ যাচাই না করে কাউকে অপরাধী বলা যাবে না।”
৪️. আইনি সেল সক্রিয়করণ:
ইচ্ছাকৃত মিথ্যা ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও মানহানির মামলা পরিচালনা।
৫️. প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কর্মসূচি:
রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য “অডিট আপত্তি ব্যবস্থাপনা” ও “মিডিয়া কমিউনিকেশন” বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা।
সংগঠনের বক্তব্যঃ
“সাংবাদিকতা মানে বিচারক হওয়া নয়; সাংবাদিকতা মানে সত্য অনুসন্ধান।
যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করা গণমাধ্যমের নীতিমালা ও সংবিধানসম্মত দায়িত্ববোধের পরিপন্থী।”
— মো. মনিরুজ্জামান মনির, সভাপতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি
চূড়ান্ত দাবিঃ
পোষ্য সোসাইটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতি দুটি জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে— ১️. সাপ্তাহিক “বিশ্ব মিডিয়া” পত্রিকার বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারের বিষয়ে আইনানুগ তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ,
২️. অডিট আপত্তি সংক্রান্ত সংবাদ প্রচারে একটি কেন্দ্রীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রশাসনিক নির্দেশনা জারি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির মতে, “মিথ্যা সংবাদ শুধু ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানেরও ক্ষতি করে।”
তারা মনে করে, এখন সময় এসেছে তথ্য যাচাইভিত্তিক সাংবাদিকতা ও দায়িত্বশীল সংবাদ প্রচার নিশ্চিত করার — যাতে রেলওয়ের ভাবমূর্তি, জনআস্থা এবং প্রশাসনিক ন্যায়বোধ সমুন্নত থাকে।

