বিশেষ প্রতিনিধি :
আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে রেললাইন কাটার অত্যাধুনিক একটি যন্ত্র তৈরি করে আলোচনায় এসেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী নাজিব কায়সার। একসময় জার্মানি থেকে যে মেশিন আমদানি করতে হতো, সেটি এখন মাত্র ২৭ হাজার ৫০০ টাকায় দেশেই তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের সহযোগিতায় রেলওয়ের নিজস্ব ওয়ার্কশপেই যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে। চলতি বছরের ৬ অক্টোবর কাজ শুরু করে মাত্র ১১ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ ১৬ অক্টোবর এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।
প্রকৌশলী নাজিব জানান, পরীক্ষামূলকভাবে বানানোর কারণে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। তবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সহজলভ্য হলে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যেই এমন একটি মেশিন তৈরি করা সম্ভব।দেশপ্রেম এবং দেশের অর্থ সাশ্রয়ের ইচ্ছা থেকেই এই উদ্ভাবনের প্রেরণা পেয়েছেন তিনি। নাজিব কায়সার বলেন, “আমি দেশকে ভালোবাসি। তাই দেশের টাকা দেশে রাখার ইচ্ছে থেকেই দেশীয় প্রযুক্তিতে রেল কাটিং মেশিন বানানোর চিন্তা করি এবং অবশেষে সেটি বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছি।”
তিনি আরও জানান, এর পরবর্তী পরিকল্পনা হিসেবে একটি ড্রিল মেশিন তৈরির কাজ শুরু করবেন, যা বিদেশ থেকে আমদানি করতে যেখানে প্রায় ১০ লাখ টাকা লাগে, দেশে সেটি মাত্র ৫০ হাজার টাকায় তৈরি করা সম্ভব হবে।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সাবেক শিক্ষার্থী নাজিব কায়সার ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০১৪ সালে রেলওয়েতে যোগ দেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই উদ্ভাবনকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখছে। পাকশী বিভাগের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) লিয়াকত শরীফ খান বলেন, “কম খরচে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই মেশিন এক অসাধারণ উদ্ভাবন। এর জন্য প্রকৌশল বিভাগ গর্বিত।”বর্তমানে ঈশ্বরদীতে রেলওয়ের কর্মচারীরা পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি ব্যবহার করছেন। এটি টেকসই প্রমাণিত হলে সরকারি খরচে ঈশ্বরদী ওয়ার্কশপেই এ ধরনের মেশিন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও প্রকৌশলী নাজিব কায়সারের এই উদ্ভাবনের প্রশংসা করেছেন। তাদের মতে, মাঠপর্যায়ে সফল প্রমাণিত হলে এটি পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চল উভয় অঞ্চলের রেলওয়ে কারখানায় সরবরাহ করা হবে।

