বিশেষ প্রতিবেদক :
ট্রেনে চেপে সুয়েজ খাল ঘুরে দেখার ভাবনাটা একসময় ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু সেই কল্পনা এখন ধীরে ধীরে বাস্তবের পথে এগোচ্ছে। মরুভূমির দেশ মিসরে শিগগিরই ছুটবে নতুন হাই স্পিড ট্রেন। যার আবার গতি ২৫০ কিলোমিটার। সিমেন্স মোবিলিটির তৈরি এই ভেলারো ট্রেনের নতুন সংস্করণ দেখা গেছে ট্রান্সএমইএ ২০২৫ প্রদর্শনীতে। ৯ নভেম্বর মিসরের নিউ কায়রোতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রথম ট্রেনটি দেখা গেছে। এই ট্রেনে চেপে রেড সি থেকে শুরু করে মেডিটেরেনিয়ান সাগর পর্যন্ত যাত্রা করা যাবে। যাত্রা হবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। এর মধ্যেই রেলগাড়িতে চেপে ঘুরে দেখা যাবে সুয়েজ খাল।
যে নেটওয়ার্ককে ‘সুয়েজ খাল অন রেলস’ বলা হচ্ছে, সেটা মূলত গ্রিন লাইন নামে পরিচিত ৬৬০ কিলোমিটারের এক নতুন রেলপথ। এই রুটটি রেড সির আইন সোখনা থেকে শুরু হয়ে কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া পেরিয়ে দূর পশ্চিমের মারসা মাতরুহ পর্যন্ত পৌঁছাবে। এই পথে আছে নতুন শুষ্ক বন্দর ‘সিক্সথ অব অক্টোবর ডিপো’। এখানে থাকছে পাঁচটি রেললাইন। সঙ্গে ২ লাখ ৬০ হাজার কনটেইনার রাখার ব্যবস্থা। জায়গাটিকে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক হাব হিসেবে ধরা হচ্ছে।এখানেই ৯ নভেম্বর ২০২৫ প্রথম পরীক্ষামূলক যাত্রা সম্পন্ন করেছে সিমেন্সের আরেক আধুনিক ট্রেন ‘ডিসাইরো হাই-ক্যাপাসিটি’। ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে চলা এই আঞ্চলিক ট্রেন ভবিষ্যতে যাত্রী আর মালবাহী পরিবহনে বড় ভূমিকা রাখবে।
অবশ্য এখন সবার মনোযোগ ভেলারো ট্রেনের ওপর। মরুভূমির উত্তাপ, ঝড়-বালু আর রুক্ষ পরিবেশের কথা মাথায় রেখে জার্মানিতে তৈরি করা হয়েছে এই ট্রেন। এর প্রতিটি কোচেই আছে বিশেষ ফিল্ট্রেশন ব্যবস্থা। আছে শক্তিশালী কুলিং সিস্টেম ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি। মোট ৪১টি ভেলারো ট্রেন চলবে মিসরের পরিকল্পিত ২ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ হাই স্পিড নেটওয়ার্কে। তিনটি লাইন মিলিয়ে এই রুট পৌঁছে যাবে দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের নাগালে। রাজধানী কায়রোসহ বড় শহরগুলোর মধ্যে যাতায়াতের সময় কমে আসবে অর্ধেকে।
প্রকল্পটি প্রথম ঘোষণা করা হয় ২০১৮ সালে। নিরাপত্তা, আরাম আর স্থায়িত্ব, আধুনিক সব সুবিধা থাকবে এই নতুন ট্রেনে। যাত্রীসেবা, সময় বাঁচানো, শহর থেকে শহরে সংযোগ, সব দিক দিয়ে এই নতুন হাই স্পিড রেল প্রকল্পকে ভবিষ্যতের মিসর গঠনের ভিত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে ট্রেনের মালবাহী সক্ষমতা বাড়বে প্রায় ৪৬ শতাংশ। যা দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনেও বড় পরিবর্তন আনবে।আফ্রিকায় এমন ট্রেন এটাই প্রথম নয়। ২০১৮ সালে মরক্কো তাঙ্গিয়ার থেকে কাসাব্লাঙ্কা পর্যন্ত মহাদেশের প্রথম হাই স্পিড ট্রেন চালু করেছে। আরও বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে নাইজেরিয়া। ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ হাই স্পিড রেল নেটওয়ার্কের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। যার প্রথম ধাপ শেষ হতে পারে তিন বছরের মধ্যে। এর পাশাপাশি আফ্রিকান ইউনিয়ন ২০৬৩ সালের মধ্যে মহাদেশজুড়ে হাই স্পিড রেল করিডর গড়ে তুলতে চায়। এতে পরিবহন ব্যয় কমবে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যকার বাণিজ্য ১৫ শতাংশ থেকে এক লাফে ৫০ শতাংশের ওপর বেড়ে যাবে।এবার দেশটি ভ্রমণকারীদের জন্য সুখবর দিল। সুয়েজ খাল এখন শুধু নৌপথের বিস্ময় হিসেবে থাকছে না, খুব শিগগিরই ভ্রমণকারীরা এটি ট্রেনে চেপে ঘুরে দেখতে পারবে।
সূত্র: সিএনএন

