কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসনে গতি সঞ্চার হোক

0
580

নদীমাতৃক দেশ হলেও আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলপথের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের টেকসই উন্নয়নে উৎপাদিত পণ্যের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ, দেশব্যাপী স্থিতিশীল দ্রব্যমূল্য বজায় রাখা, দেশে অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিবহন ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কে দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার উপযোগী একটি সুষ্ঠু ও সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য। আমাদের রেলপথ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন চালু করা হয় ১৮৯৬ সালের ৪ ডিসেম্বর। ১৯৫৮-৬০ সালে রেলপথটি পুনর্বাসন করা হয়। রেল চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ২০০২ সালে বন্ধ হয়ে যায় রেলপথটি। পণ্য পরিবহন এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে ২০১০ সালের পর বন্ধ লাইন চালু করার উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদনও দেয়া হয়।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, এ রেলপথ চালু হলে ভারত-বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আঞ্চলিক রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারবে। ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পর্যটনের প্রসার ঘটবে। দেশীয় তো বটেই পাশাপাশি ভারতীয় ট্রেনও চলাচল করবে এ পথে। শতবর্ষী রেলপথটি চালু হলে স্থানীয় ২৪টি চা বাগানসহ বৃহত্তর বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিপণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে নতুন দ্বার উম্মোচিত হবে। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসনে আশার সঞ্চার হয়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ঝুলে গেছে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন: ৪৭৭% ব্যয় বৃদ্ধির পরও কাজ করছে না ভারতীয় ঠিকাদার’ শীর্ষক প্রতিবেদন আমাদের হতাশ করে বৈকি। খবরে জানা যায়, সোয়া ১০ বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২৪ শতাংশ। কয়েক দফা চিঠি দিলেও কাজ শুরু করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারতীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানি। দূতাবাসে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছে না রেলওয়ে।

২০২০ সালে মহামারি কভিড সংক্রমণ শুরুর পর প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ ছিল প্রকল্পটির কাজ। এর মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। কাজ বিলম্ব হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়তেই পারে। আলাপ-আলোচনা ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাজ বন্ধ করে দেয়া দুঃখজনক। প্রতিকারে রেলপথ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও ভারতীয় দূতাবাসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি সময়োপযোগী বলেই আমরা মনে করি। বৈঠকের আলোচনা ফলপ্রসূ হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যে দরে কাজ নিয়েছিল, কয়েক বছরে তা অনেক বেড়েছে। এতে কোম্পানিটি বড় ধরনের লোকসানে পড়বে। তাই কাজ করতে গড়িমসি করছে প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ হবে। এর দায় মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। তারা কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন করলে নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করা যেত। তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়, কিন্তু এটি সমাধান নয়। দাবি যৌক্তিক হলেও পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব।সূত্র:শেয়ার বিজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here