মালবাহী কনটেইনার ট্রেনের গতি বেশি থাকায় ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় বগি লাইনচ্যুত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। কাঠের স্লিপারগুলো পরিবর্তন না করা পর্যন্ত দুর্ঘটনার ফলে রেললাইনের ক্ষতিগ্রস্ত ওই এলাকা দিয়ে সব ট্রেনকে ১০ কিলোমিটার গতিতে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশনমাস্টার জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জেলা শহরের কলেজপাড়ার লেভেল ক্রসিং এলাকার আউটার সিগন্যাল থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত সব ট্রেন ১০ কিলোমিটার গতিতে চলবে। নতুন রেললাইন বসানো হয়েছে। সেখানে আজ সোমবার সকাল থেকে আবারও রেলের লোকজন কাজ শুরু করেছেন। কাজ শেষ হলে সব ট্রেন আগের গতিতে চলবে।
গতকাল রোববার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের লেভেল ক্রসিং এলাকার পূর্ব দিকের আউটারে কলেজপাড়া এলাকায় ঢাকাগামী মালবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। পরে স্লিপার ঘেঁষে ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে যায়। এতে রেললাইনের অনেক স্লিপার ভেঙে গেছে। ফিশপ্লেট ও ক্লিপ সরে রেললাইন বেঁকে যায়। সাড়ে ১০ ঘণ্টা পর গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে মালবাহী কনটেইনার ট্রেনের পেছনের লাইনচ্যুত বগির চারটি চাকা উদ্ধার করে লাইনে তোলা হয়। আর ১৪ ঘণ্টা পর ঢাকামুখী আপলাইন স্বাভাবিক হয়। এর আগপর্যন্ত চট্টগ্রামমুখী লাইন (ডাউনলাইন) দিয়ে সব ট্রেন চলাচল করে। এতে সব ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে।
এ দুর্ঘটনার ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রেনটি লেভেল ক্রসিং এলাকার পূর্ব দিকের কলেজপাড়া এলাকা দ্রুতগতিতে অতিক্রম করেছে। ২৭ থেকে ৩১ নম্বর পাঁচটি বগির চাকাগুলো রেললাইন, স্লিপার ও পাথরের সঙ্গে লেগে চলছিল। এতে সেখানো ধুলা উড়ছিল। পেছনের ৩১ নম্বর বগি ও গার্ডব্রেক হেলেধুলে চলছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, মালবাহী ট্রেনটি ৪৭ কিলোমিটার গতিতে লেভেল ক্রসিংয়ের আউটারের কলেজপাড়া এলাকা অতিক্রম করে। এই এলাকা অতিক্রম করার সময় আন্তনগর ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ৪২ কিলোমিটার থাকার কথা।
মালবাহী কনটেইনার ট্রেনের লোকোমোটিভ মাস্টার (চালক) মোহাম্মদ নুরুন নবী গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, রেলস্টেশন এলাকার ভেতরে ঢোকার সময় মালবাহী ট্রেনের গতি ৩০ কিলোমিটার ছিল। ৩১ নম্বর বগি লাইনচ্যুত হয়। পেছনে ধুলা দেখতে পেয়ে গার্ডব্রেকে থাকা পরিচালকের কথায় ট্রেন থামান বলে জানান তিনি।
দুর্ঘটনার পর রেলওয়ের করা তদন্ত কমিটির সদস্য ও আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (রেলওয়ে) মেহেদী হাসান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গতি বেশি থাকায় মালবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কাঠের স্লিপার পরিবর্তন করে নতুন স্লিপার না লাগানো পর্যন্ত রেললাইনের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দিয়ে ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। স্লিপার পরিবর্তনের পর ট্রেন আগের নিয়মে চলবে।
আরও পড়ুন